চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের তুলনায় আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটের আকার কিছুটা কম হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেট কমছে ৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উচ্চাভিলাষী ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে। পরিবর্তে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন টেলিভিশনের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা করবেন। জাতীয় সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট অনুমোদিত হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এই মুহূর্তে বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য অতিরঞ্জিত হবে। যেখানে রাজস্ব আয় ৪ লাখ কোটি টাকা ছুঁতে কষ্ট হয়, সেখানে উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘাটতি আরও বাড়াবে।”
তিনি আরও বলেন, “৭ হাজার কোটি টাকা বাজেট কমানোর ঘোষণা অনেকটা কল্পনার সঙ্গে কল্পনার তুলনা করার মতো। এই বাজেট ছোট হবে না, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাজেটও হবে না, এমনকি বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সক্ষমতাও এতে থাকবে না।”
আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সরকার সাড়ে ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মনে করছে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি থাকবে ৮ শতাংশের আশপাশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অর্থ-সংকট মোকাবেলায় বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি রাখা হতে পারে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেট অনুযায়ী এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮ হাজার কোটি টাকা কম।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
নতুন বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বড় প্রকল্প না নিলেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হবে।
আগামী বাজেটে গুরুত্ব পাবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত, জ্বালানি সাশ্রয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী।
ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, আর্থিক সচ্ছলতা না ফেরা পর্যন্ত অগ্রাধিকারবিহীন প্রকল্পগুলো ধীরে এগিয়ে নেওয়া উচিত। অপচয় কমানো এবং বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণে জোর দিয়েছেন তিনি।