বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দিন যত যাচ্ছে, তত বোঝা যাচ্ছে—সামনের নির্বাচন এতো সহজ হবে না। নির্বাচন অনেক কঠিন হবে।” তার মতে, সামনের নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কঠিন নির্বাচনে পরিণত হতে যাচ্ছে, যদিও বিএনপি কিছু প্রতিপক্ষের দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছে। তবে, এটি দেশের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে বলে তিনি মনে করেন।
২ ডিসেম্বর, সোমবার খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংক কুয়েট হলে অনুষ্ঠিত বিএনপির ৩১ দফাবিষয়ক খুলনা বিভাগীয় কর্মশালায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন তারেক রহমান। এই অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন, যেখানে তিনি দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও জনগণের প্রতি আস্থার বিষয়ে আলোচনা করেন।
তারেক রহমান বলেন, “২০ বছর আগে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারত, কিন্তু ২০০১ সালের পর থেকে মানুষের চিন্তা-ধারার পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে।” এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং জনগণের মধ্যে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক সচেতনতার কথা তুলে ধরেন।
তারেক রহমান ৩১ দফার মাধ্যমে বিএনপির পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “গত ৫ মাস ধরে কিছু মানুষ সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু বিএনপি দুই বছর আগে থেকেই সংস্কারের কথা বলছে।” তার মতে, বিএনপি দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করেই সংস্কারের দিকটি সামনে এনেছে, যা ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। এই ৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সকল দলের জন্য একটি কার্যকরী পরিকল্পনা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “৩১ দফা সফল করতে হলে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে হবে এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে।”
তারেক রহমান তার বক্তৃতায় জনগণের প্রতি আস্থা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সবকিছুর লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সমর্থন আমাদের পক্ষে আনা এবং সেই সমর্থন ধরে রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “গত ১৭ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যেভাবে নেতাকর্মীরা টিকে ছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে ৩১ দফা জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছানো সম্ভব।”
তারেক রহমান বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যত কঠিন পথই হোক, ৩১ দফা জনগণের মাঝে পৌঁছানোর কাজটি করা খুবই সহজ হবে, যদি সকলে একসঙ্গে কাজ করে।” এটি জনগণের জন্য একটি বড় বার্তা এবং দলের পরিকল্পনাকে কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
তারেক রহমান বলেন, “রাষ্ট্রের সম্পদ দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য।” তিনি আরো বলেন, দেশের সম্পদ কিভাবে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো যায়, তা বিএনপি চেষ্টা করবে। এটি সরকারের সম্পদ ব্যবহারের একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ইঙ্গিত করে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ করা হবে।
খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আনিদ্য ইসলাম অমিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক ড. মওদুদ আলমগীর পাভেল প্রমুখ।
তারেক রহমানের বক্তৃতা দেশের জনগণের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যেই ছিল। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে জনগণের মধ্যে ৩১ দফার বার্তা পৌঁছানোর আহ্বান জানান। দলটির পরিকল্পনা হলো, নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জন করে তাদের পাশে রাখা এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করা।