নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা বিদেশে বন্ধু চাই, প্রভু নয়। এই বন্ধুত্ব হবে সমতার ভিত্তিতে। কেউ আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাবে, তা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে সসম্মানে থাকবে। দেশের বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না।’ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) এই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে সাম্যের বাংলাদেশ। তবে এ জন্য লড়াই করতে হবে। তাহলেই আমরা সত্যিকারের স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক হতে পারব। এই লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী মানুষের দোয়া, ভালোবাসা, পরামর্শ এবং ইতিবাচক সমালোচনা প্রত্যাশা করে।’ তিনি জানান, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জামায়াত সবসময় মানুষের পাশে থাকবে।
নারী অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। নারীদের যথাযথ মর্যাদায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া একটি সমাজ কখনও উন্নতি করতে পারে না। তাই আমরা নারীদের জন্য যথাযথ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা এমনভাবে শিক্ষিত হবে, যেন তাদের চাকরির জন্য কারও কাছে ধরনা দিতে না হয়। বরং শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার আগেই তারা কাজ পেয়ে যাবে। এই দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামী পালন করবে। আমরা এমন শিক্ষা চাই, যা সন্তানদের মধ্যে দেশাত্মবোধ, মমত্ববোধ এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাবে।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন। একটি কার্যকর ও সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হলে দেশের যুব সমাজ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
নাটোরের উন্নয়ন নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘নাটোরের কোনও অপরাধ না থাকলেও এখানে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট নেই। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অন্তত একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এ জেলার বঞ্চনার অবসান করা হোক। ভবিষ্যতে জামায়াত দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে নাটোরের জন্য কোনও দাবি পাঠাতে হবে না। আমি নিজেই এসব দাবি পূরণ করব।’
তিনি জানান, নাটোরের মানুষের জন্য উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ অঞ্চলের বঞ্চনা দূর করা হবে।
জেলা জামায়াতের আমির ড. মীর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন। তারা সবাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা তুলে ধরেন এবং সংগঠনের আদর্শিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ন্যায়ের পথে সমাজকে পরিচালিত করা। এই লক্ষ্যে আমাদের প্রতিটি কর্মীকে আরও সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।’
অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সবসময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে এসেছে। আমরা জনগণের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’
নাটোরের এই কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সংগঠনের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তারা বলেন, জামায়াতে ইসলামী এমন একটি দেশ গড়তে চায় যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে এবং প্রতিটি নাগরিক উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিদেশি প্রভুত্ব চাই না, বরং সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই। বাংলাদেশ কখনো অন্যের চাপের কাছে নত হবে না। দেশের স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
নাটোরের এই কর্মী সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী যে সাম্যের স্বপ্ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছে, তা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।