ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার শক্তি কীভাবে বিশ্বব্যাপী প্রান্তিক মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, সেই গল্পই তুলে ধরলেন নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ বক্তব্য দেন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হওয়া এ সম্মেলনে নিজের অভিজ্ঞতা ও বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “দারিদ্র্য গরীব মানুষের তৈরি নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত ত্রুটির ফলাফল।” তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা হচ্ছে সেই কার্যকর পন্থা, যা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙতে পারে এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে মানুষকে আত্মনির্ভর করতে সহায়তা করে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, জামানত ছাড়াই দেওয়া ক্ষুদ্রঋণ মানুষের জীবিকা, আয় ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে।”
ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র নারী সমাজ আজ উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হয়েছে।”
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান অর্থনীতি যেখানে সম্পদ দিন দিন উপরের দিকে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, সেখানে সামাজিক ব্যবসা হতে পারে একটি কার্যকর প্রতিক্রিয়া — যা লাভের বদলে সমাধানকে প্রাধান্য দেয়। এর মাধ্যমেই দারিদ্র্যের বেড়াজাল ছিন্ন করা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫ কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মতবিনিময় হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস সম্মেলনে অংশ নিতে চার দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন।