রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের হাঁড়িভাঙা গ্রামে একটি আলুখেতের পাশ থেকে পচাগলা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চটের বস্তায় পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মরদেহের কিছু অংশ মাটিতে চাপা এবং পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত ব্যক্তি ফেরাইজুল ইসলাম (৪০), যিনি একই গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশের ধারণা, ফেরাইজুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর মামা আবু তাহের বাদী হয়ে তাঁর বাবা আবদুস সামাদ (৬০), সৎমা নূরজাহান বেগম (৫৫) এবং আরও চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার পরপরই পুলিশ আবদুস সামাদ ও নূরজাহান বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ফেরাইজুল পেশায় রিকশাভ্যান চালক ছিলেন। তাঁর কোনো সন্তান নেই। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বাড়ির কাছে একটি ওয়াজ মাহফিল শুনতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন চাচা আবদুল বাকী বদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, ফেরাইজুলকে তাঁর বাবা ও সৎমা সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করার জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি বাড়ি ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হতো। ফেরাইজুল ২৩ অক্টোবর বাবার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন।
নিহতের চাচাতো ভাই আইনুল ইসলাম জানান, ফেরাইজুল ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়মিত নির্যাতন এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হতো। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফেরাইজুলের বাবা আবদুস সামাদ দাবি করেন, তিনি কখনো ছেলের ওপর নির্যাতন করেননি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ফেরাইজুলের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, “বাড়ি ও সম্পত্তির ভাগ না দিতে এবং বাড়ি ছাড়া করতে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।”
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান বলেন, “প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিন আগেই ফেরাইজুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
পারিবারিক বিরোধ ও সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের জেরে ফেরাইজুলের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে কাজ করছে।