আমন মৌসুমে ইঁদুরের আক্রমণে ধানের বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঈশ্বরদীর কৃষকেরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইঁদুরের তাণ্ডবের ফলে প্রচুর পরিমাণ ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, ধানের জমিতে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করেও ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুরের কৃষক তানজিরুল আলম বলেন, “গ্যাস, বিষ ট্যাবলেটসহ নানান পরামর্শ মেনে চলেও ইঁদুরের কবল থেকে ধান রক্ষা করতে পারছি না। জানি না চার বিঘা জমি থেকে কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারব।” মুলাডুলির আরেক কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, “সব ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাইনি। গর্তে কলাগাছ পুঁতেও ইঁদুর তাড়ানো যাচ্ছে না।”
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি আমন মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ইঁদুরের আক্রমণে উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ (প্রায় ৫ হাজার ৫৬৮ টন) নষ্ট হয়েছে। তবে কৃষকদের মতে, ইঁদুরে নষ্ট হওয়া ফসলের পরিমাণ ৩০ শতাংশের বেশি।
এবারের আমন চাষ: ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমি, লক্ষ্যমাত্রা: ২৭ হাজার ৮৩৯ টন ধান, ক্ষতির পরিমাণ (কৃষি বিভাগের হিসাবে): ২০ শতাংশ।
কৃষকেরা ইঁদুর তাড়াতে বিষ ট্যাবলেট, বিষ টোপ, কলাগাছ পুঁতে দেওয়া, পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা এবং আধাপাকা ধান কেটে নেওয়ার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। তবুও কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি। মুলাডুলির কৃষক মিনাজ আলী বলেন, “সাড়ে সাত বিঘা জমিতে চাষ করা ধানের অর্ধেক ইঁদুর কেটে সাবাড় করেছে।”
বাঘহাছলার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি আধাপাকা ধান কেটে নেওয়া শুরু করেছেন। তাঁর ভাষ্য, “দোকান থেকে নানা ধরনের ইঁদুর মারা বিষ কিনে ব্যবহার করেও ফসল রক্ষা করা যায়নি। বাধ্য হয়ে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, “এই এলাকায় ইঁদুরের অত্যাচার তুলনামূলক বেশি। চলতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ধান ইঁদুরে কেটে নষ্ট করেছে, যা কৃষকের জন্য বড় ক্ষতি।” কৃষকদের ইঁদুর নিধনে বিষ ট্যাবলেট, বিষ টোপসহ নানান উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। ইঁদুর মারতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ইঁদুরের আক্রমণে কৃষকেরা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ফসলের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ বিষয়ে কার্যকর ও টেকসই সমাধান এখন সময়ের দাবি।