পাবনার ঈশ্বরদীতে দিন দিন গাজর চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি গাজর চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক ভালো হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে গাজর চাষে। চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে গাজরের আবাদ ৯২০ হেক্টর জমিতে করা হয়েছে, যা থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪০ টন গাজর উৎপাদনের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজরের বীজ বপনের তিন মাসের মধ্যে ফসল ওঠানো সম্ভব। এক বিঘা জমিতে গাজর চাষ করতে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। উৎপাদিত গাজর বিক্রি করে কৃষকরা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। ফলে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ৫০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত গাজর চাষি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে গাজর জাহিদ জানান, এবার তিনি ৯০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। যদিও এবারের উৎপাদন খরচ ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে, তারপরও তিনি আশা করছেন প্রতি বিঘার গাজর ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, ঈশ্বরদীর গাজরের স্বাদ ও মান দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ভালো। এর পানির পরিমাণ কম থাকায় ১০-১২ দিন পর্যন্ত পচন ধরে না, ফলে বাজারে এর চাহিদা বেশি। তবে উত্তরবঙ্গে সবজি সংরক্ষণাগারের অভাব থাকায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এবার গাজরের উৎপাদনে চায়না ছাড়াও জাপানি জাতের গাজর চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, বেলে ও দোঁ-আশ মাটি গাজর চাষের জন্য উপযোগী। এখানকার কৃষকরা বছরের আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গাজরের ভরা মৌসুমে ব্যাপক উৎপাদন করেন। এবছর প্রতি হেক্টর জমি থেকে ২৭ টন গাজর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ঈশ্বরদীর কৃষকরা গাজর চাষে লাভবান হলেও গাজরের বাজারে চায়না থেকে আমদানি করা গাজর প্রভাব ফেলছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া সংরক্ষণাগারের অভাবও চাষিদের লাভ কমাচ্ছে। তবুও পুষ্টিকর ও লাভজনক এই সবজি চাষ এখানকার কৃষকদের জন্য একটি বড় আয়ের উৎস হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে।