এই উপজেলার প্রায় চার লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য এই ৫০ শয্যা হাসপাতালটিই একমাত্র ভরসা। কয়েক বছর আগেই তিনটা অ্যাম্বুলেন্সর মধ্যে একটা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে গ্যারেজে। আর অন্য দুইটি সচল থাকলেও তার চালক নেই। কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটিতে বকুল মিয়া নামে মাত্র ১ জন অ্যাম্বুলেন্স চালক ছিল। কিন্তু গত ৬ মাস আগে তার বদলি হওয়াতে হাসপাতালটিতে চালক শুন্য হয়ে পড়ে। সেই থেকে গত ৬ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স সেবা। বিষয়টি তারা একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত ভাবে উপর মহলে জানালেও তার কোন সুরাহা করতে পারেনি। এমন বেহাল দশার চিত্রটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে, সমস্যাটি সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের অনেকেই বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও অদ্যাবধি কেউই তার কথা রাখেনি। এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ এমন সমস্যাটি নিয়ে সর্বশেষ গত মার্চ মাসে উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে ইউএনও এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সমাধান করবেন বলে কথা দিলেও তারাও সেটি বাস্তবায়ন করেননি। ফলে, চালক সমস্যার সমাধান না হওয়াতে হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা মুমুর্ষ রোগীদের বাইরে পাঠাতে ভোগান্তীর শেষ নেই। এদিকে সচল অ্যাম্বুলেন্স দুটিও পড়ে থেকে নষ্ট হবার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এসব কারনে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মুমুর্ষ রোগীদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের আধুনিক চিকিৎসার জন্য পর্যায়ক্রমে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক আগেই স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া ওই ৩টির মধ্যে ১টি অ্যাম্বুলেন্স অচল হয়ে গ্যারেজ বন্দী আছে। আর অপর দু’টি সচল এ্যাম্বুলেন্সের বিপরিতে মাত্র ১ জন চালকের পোষ্টিং ছিল। কিন্তু তাকেও গেল বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অন্যত্র বদলি করা হয়। এরপর থেকেই এ্যাম্বুলেন্স দু’টি গ্যারেজে হয়ে আছে। অদ্যবধি হাসপাতালটিতে নতুন কোন চালক যোগদান না করাতে সরকারী এ্যাম্বুলেন্সের সেবা বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে গত শনিবার হাসপাতালটিতে গেলে দেখা যায়, এমারজেন্সি বিভাগের সামনে কিছু মানুষ হাপিতাস করছে। এগিয়ে গিয়ে জানা যায়, তাদের একজন মুমুর্ষ রোগীকে বাইরে পাঠাতে হবে, কিন্তু সরকারী এ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছে না। ওই রোগীর স্বজন পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুবল দাস জানান, তার জামাই কৃষ্ণ দাস গলাতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে এনেছেন। ডাক্তাররা রোগীকে দেখে রেফার্ড করেছেন। তাই, জরুরী ভাবে তাকে বাইরের হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু, চালক নেই বলে এই হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় স্বজনরা প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করতে দিক বিদিক ছোটাছুটি করছেন। তিনি জানান, পরে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স এনে তারা রোগীকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তাদেরই মত প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তীর স্বীকার হয়ে থাকেন অনেকেই। শহরের কলেজপাড়া এলাকার শুশান্ত মালি নামে আরেক ভূক্তভোগী জানায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকার কারণে তারাও বিকল্প ব্যবস্থায় বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে বাইরের হাসপাতালে গেছিল। ভূক্তভোগীদের দাবী দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগ দেওয়া হোক।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর এম ও ডাঃ শিশির কুমার ছানা বলেন, হাসপাতালে যে অ্যাম্বুলেন্সের চালক ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা হাসপাতালে বদলি করা করেছে। দ্রুত চালক নিয়োগের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোন চালককে এ হাসপাতালে পোষ্টিং দেওয়া হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রেজাউল ইসলাম জানান, হাসপাতালটিতে চালকের বদলি জনিত কারনে সমস্যার বিষয়টি তিনি ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন মহোদ্বয়কে অবহিত করেছেন। এছাড়াও ইতিপূর্বে লিখিতভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা ডিভিশনাল অফিসে অবহিত করেছেন। আশা করছেন চলতি মাসেই বিষয়টির সমাধান করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম জানান, এ্যাম্বুলেন্স চালক নেই, এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির দ্রুত সাধানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। জনদূর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনে খুব শিঘ্রই বিকল্প ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কামরুজ্জামান বলেন, এ্যাম্বুলেন্স চালক নেই, বিষয়টি তিনি অবহিত আছেন। বর্তমানে নতুন কোন চালকের পোষ্টিং হচ্ছে না। তারপরও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য খুব দ্রুতই একজন চালকের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।