কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সশস্ত্র হামলার রেশ না কাটতেই, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক চরম উত্তেজনাকর মোড় নিয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে উগ্র সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক তীব্র সংকটে পড়েছে।
হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তানও একের পর এক সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তানের ঘোষিত মূল পদক্ষেপসমূহ, সিমলা চুক্তি বাতিল ঘোষণা, ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা, ভারতীয় বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা — পাকিস্তানের আকাশপথে ভারতের মালিকানাধীন বা পরিচালিত কোনো বিমান প্রবেশ করতে পারবে না। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত, তৃতীয় দেশের ভারতগামী পণ্য পরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা, সার্কভুক্ত ভিসা সুবিধা বাতিল এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয়দের পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ, পাকিস্তানে ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা এবং ভারতীয় দূতাবাসে কর্মীসংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনার নির্দেশ (কার্যকর: ৩০ এপ্রিল থেকে)।
এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের জরুরি বৈঠকে, যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। বৈঠকে ভারতের সিন্ধু নদ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায় পাকিস্তান এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, “ভারত যদি সিন্ধু নদীর পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়, তবে তা যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার জবাবও সেইভাবে দেওয়া হবে।”
ভারত দাবি করেছে, কাশ্মিরে হামলায় পাকিস্তানি নাগরিকরা জড়িত ছিল। পাকিস্তান এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছে, “এই হামলার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ভারত উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে।”
দুই দেশের এমন পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলেছে। বাণিজ্য বন্ধ, আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ, সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার—সবই ইঙ্গিত দেয় এক ভয়াবহ উত্তেজনার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, না হলে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এমন উত্তেজনা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।”