বর্তমানে পরিবেশগত সংকট মোকাবেলা করা অনেকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, সারা বিশ্বে পোশাক শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। যে সমস্ত উপকরণ ব্যবহার করে পোশাক তৈরি হয়, সেগুলোর পরিবেশের ওপর প্রভাব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সিনথেটিক কাপড় তৈরিতে অপরিশোধিত তেল পুড়িয়ে তন্তু তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে। এর ফলে পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এছাড়া, সিনথেটিক কাপড় একবার ব্যবহার হয়ে গেলে তা পরিবেশে মিশে যায় না, বরং পচে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে যা পরিবেশের জন্য আরও বিপজ্জনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে যে, সিনথেটিক ফাইবার দীর্ঘ সময় ধরে জমা থাকে এবং এটি জল এবং মাটি দূষিত করতে সহায়তা করে। এই কাপড়গুলি প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট হতে পারে না, যার ফলে পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক বৃদ্ধি পায়, যা বিভিন্ন প্রাণী এবং মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং ব্যাপক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
সুতি কাপড়, বিশেষ করে যখন এটি অর্গ্যানিক (জৈব) পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়, তখন এটি পরিবেশের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তুলা একটি নবায়নযোগ্য সম্পদ এবং এর উৎপাদনে কম মাত্রায় পরিবেশের ক্ষতি হয়। সাধারণ তুলা, যদিও তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর, তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদিত হলে তা মাটির গুণাবলী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং কৃষি জমির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটি কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত পানির প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে এবং অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটি এবং জলাশয়ের দূষণ ঘটায়।
তবে, অর্গ্যানিক তুলা উৎপাদন প্রক্রিয়া ভিন্ন। এই প্রক্রিয়ায় মাটির স্বাস্থ্য এবং তার পানি ধারণ ক্ষমতা উন্নত করা হয়, কারণ কৃষকরা তুলা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের গাছ ব্যবহার করে, যা মাটির ক্ষয় কমায় এবং পোকামাকড় দূর রাখে। এর ফলে মাটি স্বাস্থ্যকর হয় এবং এটি আরও বেশি জীবন্ত ও টেকসই হয়ে ওঠে।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদীরা সিনথেটিক কাপড়ের প্রভাবকে সীমাবদ্ধ করতে অর্গ্যানিক সুতা বা তুলা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের মতে, অর্গ্যানিক তুলা কেবলমাত্র পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং এটি কৃষকদের জন্যও দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক। এতে কম পানি ব্যবহার হয়, মাটির স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং পরিবেশের ওপর চাপ কমে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাচারাল টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির (আইভিএন) হেইক হেস বলেন, “সিনথেটিক কাপড় পচে না এবং শেষ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়ে যায়।” তবে, কিছু সিনথেটিক ফাইবার প্রস্তুতকারক সংগঠন দাবি করে, কৃত্রিম ফাইবার তুলা উৎপাদনের তুলনায় পরিবেশের জন্য ভালো হতে পারে, কারণ এগুলি কৃষি জমির ওপর চাপ কমায় এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে অনেক সচেতন ক্রেতা এবং পরিবেশবাদী সংগঠন প্রচলিত তুলার বদলে অর্গ্যানিক তুলার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে। তারা মনে করেন যে, অর্গ্যানিক তুলা উৎপাদন প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয় এবং এতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম।
নিকোল প্যালিক, পিপল ওয়্যার অর্গ্যানিকের প্রধান, বলেন, "প্রচলিত তুলা মাটির ক্ষতি করে, কিন্তু অর্গ্যানিক তুলা তা করে না।"
পরিবেশের জন্য আরও টেকসই পোশাকের ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য ক্রেতাদের সচেতন হওয়া জরুরি। যদি আমরা সত্যিই জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সংকট মোকাবেলা করতে চাই, তবে আমাদের পোশাকের উপকরণ নির্বাচনেও দায়িত্বশীল হতে হবে। অর্গ্যানিক তুলা এবং পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনের দিকে ঝোঁকা এই প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।