রাজধানীর খিলক্ষেতে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি জলাধার ভরাট করে পার্ক নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় চার বছর আগে এই জলাধারের ওপর পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল মিলেনিয়াম হোল্ডিং কোম্পানি। জলাবদ্ধতার শঙ্কায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ এবং উচ্চ আদালতে রিটের পর এই প্রকল্প স্থগিত করা হয়। ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত জলাধার ভরাট করে হোটেল নির্মাণের বিষয়ে রুল জারি করে এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। তবে গত নভেম্বর থেকে সেখানে নতুন করে মাটি ভরাট শুরু হয়েছে।
স্থানটিতে আগে পাঁচতারকা হোটেলের সাইনবোর্ড থাকলেও এখন সেখানে খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নামে “খিলক্ষেত ইডেন পার্ক” নামের নতুন সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ২৩ নভেম্বর থেকে পুনরায় জায়গাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। বিজয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সেখানে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যানারও টানানো হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভরাটকৃত এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এর দুই পাশে কুড়িল ফ্লাইওভার এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। জমিটির পাশ দিয়ে গেছে ঢাকা থেকে সারা দেশের রেলসংযোগ। ইতোমধ্যে ১.৮৪ একর জমি পুরোপুরি ভরাট করা হয়েছে এবং সমতল করার কাজ চলছে।
ডিএনসিসির অবস্থান: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, “সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম সেখানে পার্ক নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তবে রেল জায়গাটি হস্তান্তর করেনি। পার্কের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো জ্ঞান নেই।”
রেলওয়ের অবস্থান: বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, “কেউ পার্ক নির্মাণের অনুমতি নেয়নি। জায়গা দখল মুক্ত করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ৫ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয় সারাদেশে রেলের জমি থেকে অবৈধ দখল সরাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বক্তব্য: খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি ও স্থানীয় বিএনপির নেতা শাহনুর আলম বলেন, “জমিটি স্থানীয়দের চাহিদায় পার্ক নির্মাণের জন্য ব্যবহার করছি। এটি পুরোপুরি জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ। জলাধার সংরক্ষণ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।”
মিলেনিয়াম হোল্ডিং কোম্পানির অভিযোগ: কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইকবাল জানান, জমিটি রেলওয়ের কাছ থেকে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছিল। আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় এক শ্রেণি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
মিলেনিয়াম হোল্ডিং কোম্পানি আদালতের আদেশের উল্লেখ করে রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে স্থিতাবস্থা লঙ্ঘনের অভিযোগও আনা হয়েছে। খিলক্ষেত থানায় বিষয়টি জানানো হলেও কার্যক্রম পুরোপুরি থামানো যায়নি।
জলাধার ভরাটের কারণে এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানটি পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দখল ও ভরাট নিয়ে রেলওয়ে, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ সত্ত্বেও ভরাট কার্যক্রম চলমান থাকা প্রশ্নবিদ্ধ।
রেলওয়ের এই জায়গা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ শুধু স্থানীয় পর্যায়ের নয়; এটি আইন, পরিবেশ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের জটিলতায় পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ এবং আদালতের রায় অনুসরণ করে এই সমস্যার সমাধান জরুরি।