রাজশাহীতে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) নগরীর কোর্ট এলাকার ক্যাথেড্রাল চার্চ প্রাঙ্গণে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি ছিল গারো সম্প্রদায়ের ফসল তোলার বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা, যা তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক।
উৎসবে সভাপতিত্ব করেন চাকমা প্রধান লোটাস লুক চিসিম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের ভিকার জেনারেল রেভা ফাদার ফাবিয়ান মারডি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন, বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, চ্যানেল আই-এর স্টাফ রিপোর্টার আবু সালেহ মো. ফাত্তাহ, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ, নানকিং গ্রুপের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা এবং পরিচালক নাসরিন হুদা, রাজশাহী ক্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতাল নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সুলতা দ্রং, ফাদার লিটন ডি কস্তা।
গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য অনুসারে অনুষ্ঠানের শুরুতে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা ফসল প্রধান অতিথির হাতে তুলে দেন। এরপর সূর্যদেবতা এবং দেবী মিসি ও সালজংয়ের উদ্দেশ্যে ফসল উৎসর্গ করা হয়।
ওয়ানগালা উৎসবে গারো সম্প্রদায়ের সদস্যরা রঙ-বেরঙের পোশাক এবং পাখির পালক মাথায় পরিধান করে লম্বা ডিম্বাকৃতি ঢোলের তালে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।
নারী ও পুরুষেরা ধর্মীয় রীতি অনুসারে দুটি আলাদা সারিতে নাচের তালে অতিথিদের মঞ্চে নিয়ে যান। পুরো আয়োজন জুড়ে গারোদের নাচ, গান, এবং সুরের মূর্ছনায় উৎসবটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
গারোদের জন্য ওয়ানগালা শুধু একটি উৎসব নয়; এটি তাদের ঐতিহ্য, জীবনধারা, এবং সংস্কৃতির প্রতীক। এই দিনটি ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবার মিলনের দিন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উচ্ছ্বাস এবং আনন্দ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
ওয়ানগালা উৎসবের মাধ্যমে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিচয় ফুটে ওঠে। এই ধরনের অনুষ্ঠান শুধু গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য রক্ষা করে না, বরং বৃহত্তর সমাজেও সংস্কৃতির মেলবন্ধন গড়ে তোলে।