এক সময় নারীদের জীবন সীমাবদ্ধ ছিল গৃহের চার দেয়ালের মাঝে। কিন্তু বর্তমানে, যুগের পরিবর্তনে নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীদের অর্ধেকের বেশি এখনও কৃষি খাতে কাজ করছে। এর বাস্তব উদাহরণ মেলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা বেড়েছে। ব্যাংক, বিমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। তবে গ্রামীণ নারীদের চিত্র ভিন্ন। ডিজিটাল যুগেও গ্রামের নারীরা কৃষি-সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন।
বাঘার সুশীল সমাজের মতে, এখানকার নারীরা ধানের চারা রোপণ, আলু, বেগুন, মুলা, পেঁয়াজ-রসুন উত্তোলন, নকশী কাঁথা সেলাই, তাঁতের কাজ, এমনকি বাড়িতে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর মতো কাজে নিয়োজিত।
বাঘায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম জানান, গত এক বছরে বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও দাম্পত্য কলহ নিয়ে প্রায় ২০০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১৫০টি আপোসে মীমাংসা হয়েছে। এই সমস্যার শিকড় দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা ও কুশিক্ষায় প্রোথিত। তিনি আরও জানান, অধিকাংশ নারী যারা কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত, তাদের স্বামীরাও চান তারা কর্মসংস্থানে যুক্ত হোক।
স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচ দশকে নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে।
আইএলও-এর ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ৩৮ শতাংশ। বর্তমানে নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের হার প্রায় সমান। তবে নারীর একটি বড় অংশ এখনও নিম্ন মজুরির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, গ্রামে নারীদের শ্রমে অংশগ্রহণ ২১ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে শহরে তা ৮ শতাংশ কমেছে। গ্রামীণ এলাকায় কর্মজীবী নারীদের হার ৫০.৮৮ শতাংশ, যেখানে শহরে এই হার ২২.৫৮ শতাংশ।
বাঘার চরাঞ্চলের কৃষক গোলাম মোস্তফার মতে, এখানকার তিন ভাগের দুই ভাগ নারী কৃষিকাজে সম্পৃক্ত। এমনকি অনেক নারী শিক্ষার্থী স্কুলে না গিয়ে মায়ের সঙ্গে কৃষি কাজ করছে। এতে তাদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সুশীল সমাজের দাবি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তাদের সংখ্যা এখনও নগণ্য। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়িয়ে নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।