জয়পুরহাট জেলা, যা উত্তর জনপদের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত, এই অঞ্চলের কৃষকদের জীবনযাত্রা মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে আলু চাষে কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে ভালো লাভের মুখ দেখলেও, এই বছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগাম আলু বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক এবার লোকসানে পড়েছেন।
এ বছরের শুরুতেই কৃষকেরা আগাম আলু তুলে ফেললেও বাজারে দাম কম থাকায় তারা লাভের মুখ দেখতে পারেননি। ঋণের চাপের কারণে অনেক চাষি তাদের পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ তো আলু তোলাও বন্ধ করে দিয়েছেন লোকসানের ভয়ে।
গত বছর আলুর বাজার ভালো থাকায় অনেক কৃষক অধিক জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু এবারের বাজারে আলুর দাম চরমভাবে কমে যাওয়ায়, তাদের জন্য উৎপাদন খরচও উঠছে না। একদিকে খরচ এবং ঋণের দায়, অন্যদিকে বাজারে দাম না পাওয়া, কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কৃষকদের অভিযোগ, আলু বিক্রি করতে গিয়ে তারা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বামন গ্রামের কৃষক সিরাজুল ও গাফফার হোসেন জানান, তারা ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন, কিন্তু বাজারে দাম এত কম যে পাওনাদারদের টাকা দেওয়ার অবস্থায় নেই। কালাই উপজেলা সদরের কৃষক দুলাল মিয়া জানান, তিনি ১৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন, কিন্তু ১২০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু কিনে এখন মাত্র ২০ টাকায় আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে, পুনট বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মাহফুজার রহমান জানান, তারা ১৮-২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে মাত্র ১ টাকা লাভে বিক্রি করছেন, কারণ আগাম জাতের আলুর সরবরাহ বেশি এবং দাম পড়েছে। ক্রেতা আবু বক্কর জানান, এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকায় যে আলু কিনেছিলেন, বর্তমানে সেই আলু বাজারে ২২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, “চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই, সময়ের সঙ্গে আলুর দাম বাড়বে। বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানি করতে আগ্রহী।” তবে কৃষকদের মতে, তারা মাঠে আলু তোলার খরচও উঠাতে পারছেন না, তাই তাদের ভরসা কমে গেছে।
এ বছর জয়পুরহাট জেলায় ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যার মধ্যে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, কিন্তু বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষকরা সেই লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারছেন না।
এ অবস্থায়, আলু চাষীরা সরকারের দ্রুত সহায়তা দাবি করেছেন, যাতে তারা লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে পারেন এবং আবার লাভের মুখ দেখতে পারেন।