জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবার (১১ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংস্কার-সংক্রান্ত ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ইতোমধ্যে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলো তাদের মতামত জানাবে। এরপর দলগুলোর মতামত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। তবে আলোচনার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, তখন থেকেই আলোচনা শুরু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “অতীতেও অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, তাই এবারও তা সম্ভব।” এর মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে, কোনো পরিবর্তন আনতে গেলে শুধু সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নয়, বরং বিশেষ পরিস্থিতিতে অধ্যাদেশের মাধ্যমেও তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন—এই পাঁচটি খাতে সংস্কারের সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য কমিশন ছয়টি সম্ভাব্য পদ্ধতির কথা বলেছে, যা নিম্নরূপ— নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে, নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে, গণপরিষদের মাধ্যমে, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে, গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে।
এই ছয়টি বিকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর সংস্কারের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মনে করে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দুটি বিষয়ে মতামত চেয়েছে।
প্রথমত, তারা সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এ ক্ষেত্রে তিনটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে— একমত, একমত নই, আংশিক একমত।
দ্বিতীয়ত, সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে মতামত চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্পের মধ্যে যেকোনো একটি নির্বাচন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও, প্রতিটি সুপারিশের পাশে ‘মন্তব্য’ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ যুক্ত করতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নয়, সাধারণ জনগণের মতামতও জানতে চায়। এজন্য খুব শিগগিরই একটি ওয়েবসাইট চালু করা হবে যেখানে নাগরিকরা তাদের মতামত দিতে পারবেন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি হবে একটি স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক আলোচনা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, এমদাদুল হক, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর দ্রুত আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ‘জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করা যাবে। এই সনদ প্রণয়ন হলে এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচনব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।