দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এ কথা জানান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের উদ্বেগ ছিল দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা কারা ধ্বংস করতে চায়, তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।"
তিনি আরও জানান, বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী একমত। এই ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে সংকট থেকে উত্তরণে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।
বৈঠকে দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ক্রমবর্ধমান জনঅসন্তোষ নিয়ে আলোচনা হয়। জামায়াতের আমির বলেন, "দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। সামনে রমজান আসছে, সেই সময় যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।"
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১০টি বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। আমির বলেন, "ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া উচিত। আমরা ৪০-এর অধিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি।"
ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "শুধু ইসকন নয়, যারা দেশবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকবে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।"
জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, "জাতীয় ঐক্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যেসব হুমকি তৈরি হয়েছে, তাদের প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।"
মির্জা ফখরুল জানান, গত কয়েক দিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপি তাদের উদ্বেগের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে।
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী উভয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন সরকার এবং সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে উভয় দলের বক্তব্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হতে পারে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে কার্যকর পথনির্ধারণ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।