বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এক উজ্জ্বল নাম, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমানের মৃত্যু সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মৃত্যুর পর তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা ভক্ত ও আত্মীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার রাত ১টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অঞ্জনা। তার মৃত্যুর পর শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে হাসপাতালে তার গোসল সম্পন্ন হয়, এবং তখনই তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়, যা সাধারণভাবে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
একটি সূত্র জানিয়েছে, অঞ্জনার শরীরের নানা জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং গণমাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে যখন তার মরদেহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে নেওয়া হয়, তখনও আলোচনা শুরু হয়।
অঞ্জনার মৃত্যু নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, তার অসুস্থতার খবর প্রথমে জানানো হয়নি। তার পালিত ছেলে, মনি, প্রথমে মনে করেছিলেন এটি সাধারণ একটি জ্বর, তাই দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে, যখন তার অবস্থার অবনতি ঘটে, তখন তাকে ১ জানুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় এবং লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরবর্তীতে সেখানেই মৃত্যু হয় এই কিংবদন্তী নায়িকার।
এ বিষয়ে তার এক নিকটাত্মীয়, সালমা হক, গণমাধ্যমকে জানান, অঞ্জনার গোসলের সময় তিনি তার শরীরে কিছু অস্বাভাবিক আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলেন, যা তার কাছে মোটেই স্বাভাবিক মনে হয়নি। তিনি আরও জানান, অঞ্জনা মাঝে মাঝে তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন এবং তার আতঙ্কের কথা জানিয়েছিলেন। “তিনি বলেছিলেন, কেউ তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে এবং তিনি অনেক ভীত ছিলেন,” বলেন সালমা।
অঞ্জনার জীবন ছিল চলচ্চিত্রে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে তিনি তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়ের গুণে তিনি দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেছেন। তার বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে ছিল ‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’, যা তাকে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুপরিচিত করে তোলে।
অঞ্জনার মৃত্যু যেন একটি রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এখন এটি তদন্তের মুখে রয়েছে। তার পরিবার, বন্ধু, এবং ভক্তদের কাছ থেকে এই মৃত্যুর পর আরও অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে—কি কারণে এবং কিভাবে তার শরীরে এমন আঘাতের চিহ্নের সৃষ্টি হলো, এবং তার মৃত্যুর আসল কারণ কী ছিল?
অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগৎ এক বিশাল শূন্যতায় ভরপুর হয়ে উঠেছে, এবং তিনি যে শূন্যতা রেখে গেছেন, তা সহজে পূর্ণ হবে না।