জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম পঞ্চগড়ে ‘পঞ্চগড় রাইজিং’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল না হয়ে, বরং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তিনি এই কমিটিকে একটি লিডারশিপ তৈরির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতি এবং সামাজিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে।
সারজিস আলম জানান, জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল হবে না। তবে, এটি একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করলেও লিডারশিপ তৈরি করতে পারে। এটি পলিটিক্যাল লিডারশিপ, অর্গানাইজেশনাল লিডারশিপ বা ভলান্টিয়ারিং লিডারশিপ হতে পারে।
তিনি বলেন, “এটি শুধু ছাত্র আন্দোলনের সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিভিন্ন বয়সী নাগরিকদের এই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হবে।” সারজিস আলমের মতে, আজকের বাংলাদেশে এমন একটি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন যেখানে বয়স ২৭ বা ২৮ বছরের ওপরে মানুষকে একত্রিত করা যাবে। যারা জীবনের বিভিন্ন স্তরে অবদান রাখতে সক্ষম, তাঁদের লিডারশিপ গড়ে তোলা হবে।
সারজিস আলম বলেছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক রয়েছে, তবে তা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো পিতৃপ্রতিম সম্পর্ক নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মূলত তরুণদের আন্দোলন হলেও, নাগরিক কমিটি সেখানে সিনিয়র নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করে।
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনে বাংলাদেশের কোনো প্রকৃত নেতা তৈরি হয়নি, শুধু দাস এবং দালাল তৈরি হয়েছে।” সারজিস আলমের মতে, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার কারণে নেতৃত্বের বিকাশ থেমে গেছে। তিনি বলেন, “এখন আমাদের প্রয়োজন এমন লিডারদের, যাঁরা নিজেকে একজন সহযোদ্ধা হিসেবে দেখতে পারবেন, যারা সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবেন।”
সারজিস আলম জানিয়ে দেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আসবে। তিনি বলেন, “যারা এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাঁদের নিয়েই সম্ভবত নতুন দল আসবে।” তিনি আরও জানান, যদি কেউ নতুন দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চান, তাহলে নাগরিক কমিটি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদেরও নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হলে তাদের পদগুলো ছেড়ে দিতে হবে।
সারজিস আলম জানান, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে, যা আগামীর বাংলাদেশে সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করবে। এই কমিটি তাদের সদস্যদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি করবে, যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই কমিটি বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবর্তন আনবে, যেখানে কেবল পলিটিক্যাল লিডার নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং অন্য সকল ক্ষেত্রের লিডারও তৈরি হবে।
এভাবে, সারজিস আলমের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে চলেছে, যেখানে বিভিন্ন বয়সের নাগরিকদের সম্মিলিত শক্তি ব্যবহার করা হবে, এবং বাংলাদেশে নতুন ধরনের লিডারশিপ তৈরি করা হবে।