বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একদফা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এবার একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বে রেখে এই দলটি গঠিত হতে যাচ্ছে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন দল ঘোষিত হবে।
নাহিদ ইসলাম, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, নতুন দলের নেতৃত্বে থাকতে পারেন। তবে দল ঘোষণার আগে তাকে উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে বলে জানা গেছে। দলটি মূলত তারুণ্যনির্ভর হবে, যা তরুণ সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করেছেন এবং নতুন দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঢাকার ২০টি থানায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলাতেও কমিটি গঠনের কাজ চলছে। আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, জানুয়ারির মধ্যেই দেশের সব জেলার কমিটি ঘোষণা করা হবে।
গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছিল। আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, দেশের জনগণ এখন একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চান, যা বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে নতুন ধারা তৈরি করবে।
নাগরিক কমিটির পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমাদের লক্ষ্য গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা এবং নতুন ধরনের রাজনৈতিক শক্তি গঠন করা। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি, যা নতুন দল গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, “২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি তরুণরা। তারা নতুন রাজনৈতিক ভাষা ও ভাব ধারণ করে একটি নতুন শক্তি গঠন করতে আগ্রহী।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া তরুণ সমাজ এবং নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে আমরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।”
নতুন দল গঠন প্রক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, বিভিন্ন পেশাজীবী ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে।
নতুন দল গঠনের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এই দলটি শহীদ ও আহতদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যকে ধরে রেখে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গঠনের এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তরুণ নেতৃত্বই হতে পারে এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি।