বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, ২০০৭ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। তার মতে, কোনো হত্যাকাণ্ডই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ছাড়া হয়নি এবং আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমত পোষণকারীদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গুম, হত্যা, টর্চার সেল, আয়নাঘরের মতো নির্যাতন কেন্দ্র পরিচালিত হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম উদাহরণ।
শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে 'ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি' আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে 'জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরাজয়' বিষয়টি আলোচিত হয়। এতে অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, ১৯৭৫ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলে আওয়ামী লীগ আজকের এই অবস্থায় পৌঁছাতে পারতো না। তার মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধাপে ধাপে দূষিত হয়েছে এবং এটি দেশের জন্য এক করুণ পরিণতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "শেখ মুজিবের সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের টেলিফোনে যোগাযোগ ছিল, কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বারবার চেষ্টা করেও শেখ মুজিবকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য রাজি করাতে পারেননি। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, এবং আওয়ামী লীগ তাকে ইতিহাসের নায়ক বানাতে গিয়ে অনেক জাতীয় নেতার অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলেছে।"
এদিনের অনুষ্ঠানে 'ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির' চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, "ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলেও রেখে গেছে হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিহ্ন। রক্তে আঁকা এই ইতিহাস দেশের সবচেয়ে বড় কালো দাগ। এই গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না।"
এছাড়া, 'জুলাই হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয়ের চেয়ে সামাজিক পরাজয় বেশি হয়েছে' শীর্ষক ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
এই আলোচনা এবং প্রতিযোগিতা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে, ২০০৭ সালের হত্যাকাণ্ড ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং আওয়ামী লীগ এর দায় এড়াতে পারে না।