গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং অন্তত ৩৯ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-টঙ্গী জোন) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। অন্যজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
টঙ্গী জেনারেল হাসপাতালে নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি মো. আমিরুল ইসলাম বাচ্চু (৭০), বাড়ি কিশোরগঞ্জ। তিনি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী ছিলেন। অপরদিকে, সাদ অনুসারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষে তাইজুল ইসলাম নামের আরেকজন মুসল্লি নিহত হন, যার বাড়ি বগুড়ায়।
টঙ্গীর জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ নার্স মো. হাফিজুর রহমান জানান, ভোর সাড়ে চারটা থেকে আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে আসতে শুরু করেন। আহতদের অধিকাংশের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর আহত ১১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের ইজতেমার আয়োজন করতে চান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা এই মাঠে তাদের ইজতেমা করতে দিতে রাজি নন। উত্তেজনার জেরে জুবায়ের অনুসারীরা আগেই মাঠ দখলে নেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাদের অনুসারীরা লাঠি-রড নিয়ে চারদিক থেকে মাঠে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং জুবায়ের অনুসারীরা মাঠ ছেড়ে চলে যান।
জুবায়ের অনুসারীদের বক্তব্য: মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী মো. আবুল বাশার জানান, “আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী গেটে পাহারা দিচ্ছিলাম। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাদের অনুসারীরা লাঠি-রডসহ আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং মূল গেট দখল নেয়।”
সাদের অনুসারীদের বক্তব্য: তাদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, “আমাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না মাঠে প্রবেশের। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাথিরা জুবায়ের অনুসারীদের বাধা ও হামলার শিকার হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সাথিরা বাধ্য হয়ে মাঠে প্রবেশ করেন।”
পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টঙ্গী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তবে এমন সহিংসতার ঘটনায় তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে চলমান বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।