ভারত সরকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় চরম সংকটে পড়েছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এর ফলে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যবোঝাই ট্রাক পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে।
গত দুই দিনে বেনাপোল থেকে অন্তত পাঁচটি ট্রাক ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব ট্রাকের পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে ট্রান্সশিপমেন্টের কার পাশ ইস্যু না হওয়ায় পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি।
বেনাপোল কাস্টমসের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, গত মঙ্গলবার ঢাকার তিনটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে তৈরি পোশাক বোঝাই করে বেনাপোল বন্দর পৌঁছায়। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণে সেগুলো দেশে ফেরত যেতে বাধ্য হয়।
২০২০ সালের ২৯ জুন, ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) এক আদেশে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছিল। এর আওতায় ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও দমদম বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুযোগ ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার CBIC সেই আদেশ হঠাৎ বাতিল করে।
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। একদিন আগেই ২০টি ট্রাকে ইউরোপগামী তৈরি পোশাক ট্রানজিটের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম চলায় এই সিদ্ধান্ত রপ্তানিকারকদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্যমতে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের একটি বড় অংশ ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি হতো। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা হঠাৎ বাতিল করলেও বাংলাদেশ এতে সমস্যায় পড়বে না। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সকল অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতায় কোনো ঘাটতি না থাকে এবং রপ্তানিতে যোগাযোগের সমস্যা না হয়—সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করব বলে আশা করছি।”
ভারতকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এ মুহূর্তে তা বিবেচনায় নেই। আমরা আমাদের সক্ষমতা উন্নয়নের দিকেই মনোযোগী।”
তিনি আরও জানান, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন পণ্য ভারতের বন্দর হয়ে ইউরোপে রপ্তানি হতো। এখন সেই পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য তিন মাসের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তির কারণ হবে। এই সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক সক্ষমতা ও রপ্তানির পথ সুসংহত করার কাজ করা হবে।