বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত ১৬ বছরে বিএনপির বহু নেতা-কর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। নীলফামারীর বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর মতো বহু নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। আমরা এই নির্যাতনের জবাব তাদের মতো করে দেব না। তারা অধম বলে আমরাও অধম হব না। আমরা সব নির্যাতনের জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব।”
আজ সোমবার বিকেলে নীলফামারীতে এক জনসভায় লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন তারেক রহমান। সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরি দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’। এই জনসভা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি র্যাবের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর স্মরণ এবং তার পরিবারকে একটি নতুন বাড়ি হস্তান্তর।
তারেক রহমান তার বক্তৃতায় দলীয় নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের সংযত থাকতে হবে এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করতে হবে। স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’ এর অর্থ হলো, জনগণের বাক্স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য অর্জনে দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে।”
তারেক রহমান বলেন, “দেশের জন্য আমরা দলীয়ভাবে কী করব, এসব আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে আমাদের কাজের হিসাব দিতে হবে। শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে এখনো অনেক দূর এগোতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সব মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ। ইনশা আল্লাহ, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি, উদার রাজনৈতিক পরিবেশ, এবং সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত হবে।”
অনুষ্ঠানে নিহত গোলাম রব্বানীর বড় মেয়ে রওনক জাহান তার বাবার হত্যার বিচার দাবি করেন। তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিহত গোলাম রব্বানীর স্ত্রীর হাতে নতুন বাড়ির চাবি তুলে দেন। এছাড়া, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত রংপুর বিভাগের ১২ জন নেতা-কর্মীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান। সদস্যসচিব মোখছেদুল মোমিন ও সদস্য মোস্তাকিম বিল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, যেমন – সাবেক উপমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, দলের কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহ-বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন, এবং রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান। নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সহসভাপতি মীর সেলিম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, এবং আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আবু মো. সোয়েমও উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের জনগণের আস্থা ধরে রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সব নির্যাতনের জবাব শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে দেব।”
তারেক রহমানের এই বক্তৃতায় বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দলীয় অঙ্গীকার স্পষ্ট হয়েছে। জনসভায় তার নেতৃত্বে বিএনপি পরিবার অতীতের অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেছে।