দীর্ঘ দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠ সাজাতে ব্যস্ত। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিতে চান। ইতোমধ্যে শতাধিক আসনে তরুণ নেতাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও বিএনপি সমমনা পাঁচটি দলের জন্য কিছু আসনে ছাড় দেবে। প্রাথমিকভাবে ছয়টি আসন ছেড়ে দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা ২৫-এ পৌঁছাতে পারে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
দল গোছানোর লক্ষ্যে ঢাকা ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক বিভাগে দায়িত্ব দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। এছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল সারা দেশে তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, এবং সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে একটি রোডম্যাপ প্রদানের তাগিদ দিচ্ছেন। বিএনপি আশাবাদী, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে সহায়ক হবে।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি, দলীয় বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন।
ঢাকা বিভাগে, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও আব্দুস সালাম আজাদ মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ জনসংযোগ ও দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার মীর হেলাল মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। নোয়াখালী-৫ আসনে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন।
রাজশাহী বিভাগে, রাজশাহী-৫ আসনে আবু বকর সিদ্দিক এবং জয়পুরহাট-২ আসনে প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
খুলনা বিভাগে, যশোর-৩ আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ স্থানীয় জনগণের কাছে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
সিলেট বিভাগে, মৌলভীবাজার-২ আসনে বদরুল আলম শিপলু এবং সিলেট-৬ আসনে ড. এনামুল হক চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগে, পটুয়াখালী-২ আসনে মো. মুনির হোসেন এবং পিরোজপুর-৩ আসনে এ আর মামুন খান নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করছেন।
রংপুর বিভাগে, দিনাজপুর-২ আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ দলীয় বার্তা প্রচারে ব্যস্ত।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা স্থানীয় পর্যায়ে নানা সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। দলের নির্দেশনায় তারা বিএনপির ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
বিএনপি ভবিষ্যৎ সরকার পরিচালনার জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। এতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন এবং একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার মতো সংস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত। দলীয় কর্মসূচি এবং জোটগত কৌশলের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে চায়। তরুণ নেতৃত্ব ও ইতিবাচক বার্তার মাধ্যমে বিএনপি জনগণের মন জয় করতে চায়।