বিখ্যাত তারকা ও ধনকুবেরদের নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা প্রায়ই আশ্চর্যজনক রোমান্টিক। তারা সঙ্গী হিসেবে নিখুঁত এবং স্বপ্নের মতো হতে পারেন বলে মনে করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরায়েলের রাইকম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, ক্ষমতা ও বিত্তের অন্ধকার দিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ক্ষমতা কীভাবে সম্পর্কের বিশ্বস্ততা ও গুণগত মানে প্রভাব ফেলে তা অনুসন্ধান করা। বিভিন্ন পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষকেরা দেখেছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ সময় সঙ্গীর প্রতি মনোযোগ কম থাকে এবং তাদের আচরণে সম্পর্কের মূল সুর নষ্ট হয়ে যায়।
ক্ষমতাবানদের প্রতিপত্তি ধরে রাখতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, মিটিং, এবং ব্যক্তিগত কর্মজীবনের চাপের কারণে সঙ্গীর জন্য সময় দেওয়ার সুযোগ অনেকটাই কমে যায়। এতে সঙ্গী অনুভব করেন অবহেলা।
ক্ষমতাবানদের মধ্যে প্রাধান্যবোধ কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, তারা নিজেদের সঙ্গীর চেয়ে শ্রেয়তর মনে করেন। এই মনোভাবের কারণে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং অনেক সময় সম্পর্ক ভেঙে যায়।
বিত্তশালী ও ক্ষমতাবানরা নিজেদের প্রয়োজন ও ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেন। সঙ্গীর চাওয়া বা মনের কথা শোনা তাদের কাছে গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, একটি সন্ধ্যা একসঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনাও তাদের কাজের চাপে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক মনোবিদ গারিট বিরনবাম বলেছেন, ক্ষমতার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কের মূল সুর নষ্ট করে দেয়। ক্ষমতাবানেরা সম্পর্ককে পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন, যা সম্পর্কের আন্তরিকতা এবং আবেগকে ম্লান করে তোলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সঙ্গীর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে নিজেদের অবস্থান ও স্বার্থ রক্ষা করতেই বেশি আগ্রহী। এ ধরনের মনোভাব সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল করে এবং সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষকেরা অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, এই ফলাফল সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি হয়তো চমৎকার সঙ্গী হতে পারেন। তবে গবেষণায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণ মিলেছে যে, ক্ষমতার অন্ধকার দিক সম্পর্কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ক্ষমতা ও বিত্ত সম্পর্ককে স্থিতিশীল করার বদলে অনেক সময় জটিল করে তোলে। ক্ষমতাবান ও ধনকুবেরদের মধ্যে সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে সত্যিকারের সফলতা অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা এবং সঙ্গীর প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।