ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে কিছু ‘হাড়গোড়’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বর্তমানে এই বিষয়ে ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে। ধানমন্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ জানান, “৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে, এখন সেগুলো মানুষের না কি অন্য কোনো প্রাণীর, সেটি নিশ্চিত হতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে।”
সিআইডির তদন্ত দল আলামত সংগ্রহ শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এখন ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে, এগুলো মানুষের হাড়গোড় কি না, এবং যদি হয়, তাহলে এগুলোর উৎস কী।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে বক্তব্য দেওয়ার পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর থেকেই সেখানে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চলতে থাকে।
৭ ফেব্রুয়ারি একদল বিক্ষোভকারী ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির মাধ্যমে ৩২ নম্বরের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলে। ৮ ফেব্রুয়ারি দিনভর লুটপাট চলে, যেখানে লোহার রড, বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যায় লোকজন। বিকেলের দিকে সেখানে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্না করা হয় এবং রাতে বিশাল জেয়াফতের আয়োজন হয়।
বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নির্মাণাধীন একাধিক বেজমেন্ট পাওয়া যায়, যা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়ির পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট দেখতে পায়। তারা দেখতে পায়, দুই তলা পর্যন্ত নামা গেলেও পরবর্তী ফ্লোর পানিতে ডুবে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর নিচে আরও কয়েকটি তলা থাকতে পারে।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পানি সেচ করার কাজ শুরু করে এবং দুপুর সোয়া ১টার দিকে কাজ সম্পন্ন করে। এরপরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করতে আসে।
বর্তমানে সিআইডি ফরেনসিক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি হাড়গোড়গুলো মানুষের হয়, তাহলে এ বিষয়ে আরও গভীর তদন্ত হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং ৩২ নম্বরের বেজমেন্টে পাওয়া এই নতুন আলামত ভবিষ্যতে কী ধরনের রাজনৈতিক বা আইনগত প্রভাব ফেলতে পারে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সব দিক মাথায় রেখে তদন্ত পরিচালনা করছে।