নারায়ণগঞ্জ জেলায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরণের সহিংসতা নারী ও শিশুদের জীবনে গভীর সংকট তৈরি করছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে নারী নির্যাতনের ৩৮৬টি ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০২টি ধর্ষণের ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া এলাকায় সংগঠনটির জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি রীনা আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুনের সঞ্চালনায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি আঞ্জুমান আরা আকসির, সহ-সভাপতি প্রীতি কণা দাস, কৃষ্ণা ঘোষ, লিগ্যাল এইড সম্পাদক জেসমিন আজিজ আলো, সহ-সাধারণ সম্পাদক শোভা সাহা, এবং প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ সুজাতা আফরোজ।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ধর্ষণ: ১০২টি, শিশু বলাৎকার: ১৬টি, হত্যা: ৩১টি, আত্মহত্যা: ২৭টি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন: ২৬টি, যৌন হয়রানি: ৪১টি, শ্লীলতাহানি: ১৫টি, অপহরণ: ২৭টি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন: ৪৯টি, সাইবার ক্রাইম: ১১টি, উত্ত্যক্তকরণ: ৪৯টি।
সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল ৩০৭টি। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৪টিতে। আর চলতি বছরে নভেম্বর পর্যন্ত এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৬টিতে।
রীনা আহমেদ বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা এখন আর তৃণমূলে সীমাবদ্ধ নেই। শহরাঞ্চলেও অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি, এবং সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার এসব সহিংসতার পেছনে একটি বড় কারণ।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা নারী নির্যাতনের এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, পরিবার, সমাজ, এবং রাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা সম্ভব নয়।
নারায়ণগঞ্জের এই পরিস্থিতি সমগ্র দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরও দৃঢ় সামাজিক এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা।