নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি বায়তুল আমানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে কয়েকশ’ ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে ওই ঐতিহাসিক ভবনটিতে হামলা চালায়। একপর্যায়ে ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে বাড়ির দেয়াল ও ছাদ ভেঙে ফেলা হয় এবং পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সন্ধ্যার দিকে ছাত্র-জনতার একটি বিশাল দল চাষাঢ়ায় অবস্থান নেয়। তারা প্রথমে হাতুড়ি ও লাঠিসোটা দিয়ে বায়তুল আমানের দেয়াল ভাঙতে শুরু করে। এক পর্যায়ে, তারা ভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভবনের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রথম দফার হামলার পর, বিক্ষোভকারীরা একটি ভেকু নিয়ে এসে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। তারা সেই ভেকুর সাহায্যে দেয়াল ও ছাদ ভেঙে ভবনটিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দিতে থাকে এবং এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বায়তুল আমান শুধু শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি নয়, এটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ। ১৯৫২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই বাড়িটি।
হামলার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে, এর আগেই বাড়িটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, কারণ দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও বিরোধী পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে ছাত্র-জনতার এই বিক্ষোভ নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।