পঞ্চগড় জেলা ভারতের সীমান্তঘেঁষা। তিন পাশজুড়ে ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা থাকায় এ অঞ্চলে মাদক প্রবেশ এবং বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় ফেনসিডিল, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, গাঁজা এবং চেতনানাশক ট্যাবলেট ও ইনজেকশন এ অঞ্চলের যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এ মাদক ব্যবহারে অনেক তরুণ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।
মাদক প্রতিরোধে পঞ্চগড়ে পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করছে। রামের ডাঙা, পুরানা ক্যাম্প, রাজনগর, পৌরসভা খালপাড়া, ধাক্কামারা মিলগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এছাড়া যৌথ বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। তবে কার্যক্রম সত্ত্বেও মাদকের বিস্তার সম্পূর্ণ রোধ করা যায়নি।
মাদক প্রতিরোধে সম্প্রতি এলাকাভিত্তিক জাগরণ শুরু হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় তরুণ এবং যুবসমাজ লাঠি হাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। মাদক ব্যবসায়ী বা সেবনকারীদের হাতে-নাতে ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করছেন তারা। স্থানীয় তরুণদের উদ্যোগে রামের ডাঙা, মসজিদপাড়া এবং রাজনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মাদকবিরোধী জনসচেতনতা বাড়াতে পঞ্চগড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে। ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটে এ প্রচারাভিযানের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাদকের কুফল সম্পর্কে জানিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পঞ্চগড় সুহৃদ সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সাবেদ আলী।
সুন্দর সমাজ গড়তে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “আমরা মাদক প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক সভা, উঠান বৈঠক এবং র্যালি করেছি। মানুষ সচেতন হয়ে এলাকাভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।” প্রধান শিক্ষক মো. তাহেরুল ইসলাম বলেন, “মাদক একটি পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মাদককে না বলার মানসিকতা তৈরি করে আমরা সমাজকে সুস্থভাবে এগিয়ে নিতে পারব।”
২৩ নভেম্বর পঞ্চগড় সুহৃদ সদস্যরা সাংগঠনিক আলোচনায় মিলিত হন। এ সময় মাদকবিরোধী কর্মসূচির পাশাপাশি শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়। নতুন কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘটে। সুহৃদ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সুহৃদ সদস্যরা আরও ব্যাপকভাবে কাজ করবে।
মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে প্রশাসনের পাশাপাশি তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পঞ্চগড়ের এ উদ্যোগ সারাদেশে মাদকবিরোধী আন্দোলনের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।