পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা আবারও ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের এমন তীব্রতায় বেড়েছে শীতজনিত রোগবালাই। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ।
গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে ফের ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ জানান, “দুই দিন তাপমাত্রা বাড়ার পর আজ আবার কমে গেছে। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।”
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। দিনের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি শীতজনিত রোগে ভুগছেন।
শীতের কারণে আয়-রোজগারও কমেছে নিম্নআয়ের মানুষের। বিশেষ করে ভ্যানচালক, দিনমজুর, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিকদের কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছেন, “তাপমাত্রা উঠানামা করছে। সকালে হাড় কাঁপানো শীত। রোদ উঠলেও হিমেল বাতাস কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবারে কারও না কারও জ্বর-সর্দি হচ্ছে। আর্থিকভাবে বিপাকে পড়েছি আমরা।”
স্থানীয় ভ্যানচালক সোলায়মান বলেন, “সকালে কাজে বের হতে পারছি না। ঘর থেকে বের হলেই ঠান্ডায় কষ্ট হয়। যেসব দিন কাজ করতে পারি না, সেদিন ঘরে খাবারও জোটে না।”
দিনমজুর নাজমুল হক বলেন, “আমার দুই ছেলে শীতজনিত জ্বরে ভুগছে। ওষুধ কিনতে পারছি না। একদিকে কাজ নেই, অন্যদিকে চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আমরা খুব বিপদে আছি।”
মঙ্গলবার সকালে বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে শতকরা ৯৯ ভাগ। ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা থাকলেও পরে রোদ উঠেছে। তবে ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা কমেনি।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন শীতকালে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে। গরম কাপড় পরিধান ও সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে।
শীতের এমন আবহাওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে। দ্রুত ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
পঞ্চগড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে এবং শীতজনিত রোগে বাড়ছে দুর্ভোগ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।