নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দুটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘এই রায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বার উন্মোচিত হলো।’
আজ মঙ্গলবার হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো গণতন্ত্রের পরিপন্থী উল্লেখ করে তা বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ৭ক, ৭খ ও ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয় এবং ৩ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে ১৮ আগস্ট বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট আবেদন করেন।
হাইকোর্টে রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করা হয়। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। শুনানিতে বিএনপি, গণফোরাম, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হন।
হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি খুব উৎফুল্ল, আনন্দিত এবং অত্যন্ত সন্তুষ্ট এই রায়ে। এটি একটি ঐতিহাসিক ও সেমিনাল রায়।’ তিনি আরও বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং গণতন্ত্র ফিরে আসার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, গণতন্ত্র কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করবে রাজনীতিবিদদের আচরণ ও দেশের নাগরিকদের করণীয়র ওপর। গণতন্ত্র ফিরে আসতে হলে সবার উচিত নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুইভাবে কর্তৃত্ববাদী সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমত, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। দ্বিতীয়ত, সংবিধানে ৭ (ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করে জনগণের মতপ্রকাশ ও সমালোচনার অধিকার খর্ব করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা চরম প্রতিকূল অবস্থাতেও সত্যের পক্ষে লড়েছি। আদালত আমাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং দেশের নাগরিকদের পক্ষে আমাদের এই লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’
বদিউল আলম মজুমদার এই রায়ের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, ‘গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য নিজেদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।’