জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচজন নিহত এবং একাধিক আহত হওয়ার পর, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক গোয়েন্দাদের দ্বারা পরিচালিত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক তদন্তে সহায়তা করতে প্রস্তুত। এর মধ্যে আমেরিকান কর্মকর্তাদের প্রতি সহানুভূতির আহ্বানও করেছেন তিনি। এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, যার মধ্যে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা এবং সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা অন্তর্ভুক্ত।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, হামলার পরে ভারতের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে করা হচ্ছে। আসিফের মতে, ভারতের প্রতিক্রিয়া কোনও তদন্ত ছাড়াই একপাক্ষিক এবং অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, “অথচ কোনো প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।” পাকিস্তান চাইছে, কোনো ধরনের যুদ্ধ শুরু না হয়ে বরং আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা হোক।
এটি এমন এক সময় ঘটেছে যখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের পর, কাশ্মীরের ইতিহাসে এটি সর্বশেষ বড় সন্ত্রাসী হামলা। ২০১৯ সালের হামলার পর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যার ফলস্বরূপ অঞ্চলটির মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। যদিও ভারত অভিযোগ করেছে যে হামলায় লস্কর-ই-তৈয়বা গোষ্ঠী দায়ী, পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খাজা আসিফ বলেন, “লস্কর-ই-তৈয়বা এখন নিষ্ক্রিয়, তারা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে এমন আক্রমণ পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখে না।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, এই হামলার পরবর্তী পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ ভারতের এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা শান্তি বজায় রাখতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছেন। পাকিস্তান এবং ভারত উভয়ই সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কেও বড় ধরনের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “প্রতিটি সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের শাস্তি দেয়া হবে।” এদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকারকারী দলটির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। আসিফ দাবি করেছেন, হামলাটি সম্ভবত কাশ্মীরের স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হতে পারে, যারা স্থানীয় নিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রাম করছে।
যদিও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ ঘটনায় বড় ধরনের কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, পাকিস্তান চাইছে আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হোক। একদিকে যেখানে ভারত সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে, অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, যাতে এ ধরনের উত্তেজনা সীমান্তের বাইরে চলে না যায়।