বাংলাদেশি কর্মীদের তিনটি প্রধান শ্রমবাজার – মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও কাতারে – পাসপোর্ট জটিলতায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। ছয় মাস অপেক্ষার পরও এই সমস্যার সমাধান মিলছে না।
প্রবাসীরা জানিয়েছেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। সময়মতো পাসপোর্ট না পেলে তাদের গ্রেপ্তার বা জরিমানার শঙ্কায় পড়তে হবে। অনেকেরই চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৪৬,০০০-এর বেশি প্রবাসী মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২৮,০০০ পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় এবং ১৪,০০০ পাসপোর্ট এখনও প্রক্রিয়াধীন। সৌদি আরবে এক লাখের বেশি পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে ৮৫,০০০ পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। কাতারে ১০,০০০ প্রবাসী পাসপোর্ট জটিলতায় ভুগছেন।
দূতাবাসগুলো বলছে, এমআরপির বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপারের ঘাটতি এবং প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাসপোর্ট ছাপার কাজে দেরি হচ্ছে। তবে প্রবাসীরা ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে দ্রুততার সঙ্গে পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ফি জমা দিয়ে ই-পাসপোর্টে রূপান্তরের সুযোগ রয়েছে।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন পাসপোর্ট তৈরির কাজ আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসকেলকে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু প্রবাসীদের অভিযোগ, পাসপোর্ট না পাওয়ায় অনেকে অবৈধ হয়ে পড়ছেন।
হাকিম মায়েখ, একজন প্রবাসী, জানান, “আমি ৩১ মে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেছি। জুলাইয়ে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। এখনো পাইনি। এপ্রিলের মধ্যে পাসপোর্ট না পেলে আমি অবৈধ হয়ে যাব।”
সাইফুল ইসলাম, আরেক প্রবাসী, বলেন, “আমাকে ই-পাসপোর্ট করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সমস্যার কারণে তা করা যাচ্ছে না।”
সৌদি আরবে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসীর মধ্যে বহু মানুষ পাসপোর্ট নবায়নের সমস্যায় ভুগছেন। ইকামা নবায়ন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রবাসী বলেন, “পাঁচ মাস ধরে পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারছি না। এতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হয়ে গেছে। রেমিট্যান্স পাঠাতেও সমস্যা হচ্ছে।”
কাতারে ১০,০০০ প্রবাসী চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। রেসিডেন্সি নবায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রবাসীরা বলছেন, দ্রুত সমাধান না হলে দেশে ফেরত আসা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) সুফি আব্দুল্লাহ হীল মারুফ বলেন, “ঢাকার প্রিন্টিং সমস্যার কারণে এমআরপি পাসপোর্ট আটকে আছে। তবে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে। আমরা অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি।”
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রবাসীরা এই সংকটের দ্রুত সমাধান চান। বিশেষ করে, ই-পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র: কালের কণ্ঠ