কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় পুলিশের পিটুনিতে ইয়াসিন মিয়া (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর থানায় কর্মরত চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার হওয়া চার পুলিশ সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাহিদ হাসান, কনস্টেবল মস্তফা মিয়া ও আশরাফুল ইসলাম। তাঁরা সবাই কটিয়াদী থানায় কর্মরত ছিলেন।
অটোরিকশাচালক ইয়াসিন মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই অভিযুক্ত চার পুলিশ সদস্যকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওসি তরিকুল বলেন, “মৃত্যুর ঘটনার পরপরই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরুতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। তখন ইয়াসিন মিয়ার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অপেক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত সোমবার সন্ধ্যায় কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চরঝাকালিয়া গ্রামে লিটন মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন এসআই কামাল হোসেন। লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনার অভিযোগ ছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে লিটন মিয়ার পরিবারের লোকজন পালিয়ে যান।
ওই সময় লিটনের বাড়িতে ছিলেন অটোরিকশাচালক ইয়াসিন মিয়া। পুলিশের ভয়ে তিনিও দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।
ইয়াসিন মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ থানায় দায়ের করা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনের কারণেই ইয়াসিনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযানের সময় ইয়াসিন পালানোর চেষ্টা করলেও তাঁকে আটক করা হয়নি। মৃত্যুর পর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। তবে আঘাতের কোনো চিহ্ন না পাওয়া গেলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
ইয়াসিন মিয়ার মৃত্যুর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
অভিযানের সময় পুলিশের ভূমিকা ও অটোরিকশাচালকের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই এ ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বহীন আচরণের সমালোচনা করছেন।
অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের অবহেলা বা দায়িত্বে গাফিলতি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।