জাতিসংঘের প্রতিবাদ
ইয়াকুব কামাল
১২ ই পৌষ ১৪৩১ বাংলা
২৮ শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রোজ শনিবার
নদ-নদী বন কৃষি জমি বন পাহাড় আর পুকুর,
খাইরে আমরা দু পায়া সব মানব রূপের কুকুর।
প্রাণ পরিবেশ ধ্বংসকারি দেশের কলজে আমরাই,
দু পায়া সব কুকুরেরাই গরীব লোককে কামরাই।
জন্মের যদি ঠিক থাকতো আর ঠিক থাকতো বাপ-মা,
আমরা এমন অপবিত্র তাই অপবিত্র আত্মা।
অভিশপ্ত নর খাদক দেশদ্রোহী সবাই,
গিলে খেয়ে প্রাণ পরিবেশ ধংস করছি সদাই।
একটু লজ্জা থাকলে কি আর দেশকে করি হত্যা,
তাইতো আজকে দেশর কারোই নেইগো নিরাপত্তা।
জাতিসংঘ সহ সকল দেশ পরিবেশ আজ,
বিশ্বের নদী ঘাতকদের জানায় প্রতিবাদ।
এসো প্রিয় সারাবিশ্বের সকল কৃষক সংঘ,
দেশকে সবুজ দিয়ে সাজাই বলছে জাতিসংঘ।
সবুজ হয় যদি দেশ থাকবে না আর অভাব,
দ্রব্যমূল্য কমে যেতো বলে গরীব নবাব।
এই কবিতাটি দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ। লেখক আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে, আমরা মানবজাতি কতটা দায়িত্বহীনভাবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে চলেছি। কবিতার প্রতিটি পঙক্তি গভীর দুঃখ এবং উদ্বেগের সঙ্গে পরিবেশের প্রতি মানুষের অবহেলার চিত্র তুলে ধরে। এটি একদিকে যেমন আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে, অন্যদিকে তেমনি আমাদের অপবিত্র, স্বার্থপর মনোভাবের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ।
কবিতার শুরুতেই লেখক অত্যন্ত তীব্র ভাষায় পরিবেশের প্রতি মানুষের অপরাধী আচরণ তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, "খাইরে আমরা দু পায়া সব মানব রূপের কুকুর,"—এই পঙক্তির মাধ্যমে তিনি আমাদের শ্রেণীভেদহীন, অমানবিক আচরণকে খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন। এখানে "দু পায়া কুকুর" শব্দের ব্যবহার প্রকৃতির প্রতি আমাদের অশুভ আচরণ ও দায়িত্বহীনতাকে চিত্রিত করেছে। অর্থাৎ, আমরা মানুষ হিসেবে প্রকৃতির প্রতি কতটা নিষ্ঠুর ও অকৃতজ্ঞ হতে পারি, এই কথাটিই উঠে এসেছে।
লেখক আরও বলেন, "প্রাণ পরিবেশ ধ্বংসকারি দেশের কলজে আমরাই,"—এখানে প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবহেলা এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংসের জন্য নিজেদের দায়ী করেছেন। দেশের পরিবেশ ধ্বংসের জন্য কাঠামোগত অব্যবস্থাপনা এবং স্বার্থপর মনোভাব দায়ী, যা গরীব মানুষের জীবনে বিশাল নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘‘দু পায়া সব কুকুরেরাই গরীব লোককে কামরাই’’—এটা শুধু মানুষের পরিবেশধ্বংসী আচরণ নয়, গরীব জনগণের বিপর্যয়ও।
এরপর কবিতায় লেখক বলেন, "জন্মের যদি ঠিক থাকতো আর ঠিক থাকতো বাপ-মা, আমরা এমন অপবিত্র তাই অপবিত্র আত্মা।" এখানে তিনি আমাদের জন্ম ও পরিবারের শুদ্ধতার সাথে যুক্ত করে বলছেন, প্রকৃতির শত্রু হওয়ার পেছনে আমাদের অস্বাভাবিক আচরণের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। আমরা নিজেদের দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে অপবিত্র হয়ে পড়েছি।
কবিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, লেখক বলেছেন, ‘‘অভিশপ্ত নর খাদক দেশদ্রোহী সবাই, গিলে খেয়ে প্রাণ পরিবেশ ধংস করছি সদাই।’’—এখানে তিনি আমাদের সেই ধ্বংসাত্মক মনোভাবের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন, যেখানে আমাদের দুর্নীতিপরায়ণ, স্বার্থপর সিদ্ধান্তই পরিবেশ ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ বিপর্যয় এবং তার পরিণতি:
লেখক পরবর্তীতে বলেন, ‘‘একটু লজ্জা থাকলে কি আর দেশকে করি হত্যা, তাইতো আজকে দেশর কারোই নেইগো নিরাপত্তা।’’ এই বক্তব্যটি অত্যন্ত মারমুখী এবং ভাবনাযোগ্য, যেখানে তিনি বুঝিয়েছেন যে যদি আমরা প্রকৃতি ধ্বংস করতে থাকি, তবে একদিন দেশ আর নিরাপদ থাকবে না। আমাদের আস্থার জায়গা, দেশের সুরক্ষা কোথায় থাকবে—এই প্রশ্নটি রেখে লেখক এক ধরনের বিপদের শঙ্কা তুলে ধরেছেন।
পরবর্তী অংশে, লেখক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন, ‘‘জাতিসংঘ সহ সকল দেশ পরিবেশ আজ, বিশ্বের নদী ঘাতকদের জানায় প্রতিবাদ।’’ তিনি বিশ্ববাসীকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন যাতে নদীঘাতক, পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে তোলা যায়। একই সাথে তিনি কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান, ‘‘এসো প্রিয় সারাবিশ্বের সকল কৃষক সংঘ, দেশকে সবুজ দিয়ে সাজাই বলছে জাতিসংঘ।’’ এখানে তিনি সবুজ পরিবেশের গুরুত্ব এবং কৃষকদের ভূমিকা তুলে ধরছেন।
সবুজ পরিবেশের উপকারিতা:
কবিতার শেষ অংশে, লেখক এও বলেন, ‘‘সবুজ হয় যদি দেশ থাকবে না আর অভাব, দ্রব্যমূল্য কমে যেতো বলে গরীব নবাব।’’ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যেখানে লেখক সবুজায়নের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, যদি আমরা পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই এবং সবুজায়ন বৃদ্ধি করি, তাহলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, দ্রব্যমূল্য কমবে এবং গরীব মানুষদের জীবনের মান উন্নত হবে।
কবিতার মূল বার্তা:
এই কবিতাটি মূলত একটি সামাজিক এবং পরিবেশগত সতর্কবার্তা। লেখক পরিবেশের প্রতি আমাদের উদাসীনতা এবং স্বার্থপরতা চিহ্নিত করে আমাদেরকে দায়ী করেছেন। এটি দেশের মানুষের জীবনের উপর প্রকৃতির অবহেলা ও ধ্বংসের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলছে। সেইসাথে, এটি একটি বিশ্বব্যাপী আহ্বান, যেখানে লেখক দেশের প্রতিটি মানুষ এবং রাষ্ট্রকে প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
এই কবিতা আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, যদি আমরা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না করি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। লেখকের এই কবিতা শুধু দেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করার একটি প্রয়াস। তাই, আমাদের উচিত প্রকৃতি রক্ষায় সকলকে একত্রিত করা এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে।