ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী। এবার তিনি ‘সালথা উপজেলা প্রেস ক্লাব’ নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করেছেন, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সালথায় সম্প্রতি গঠিত এই প্রেস ক্লাবের সভাপতি হিসেবে নিজের নামই রেখেছেন মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলামকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শওকত হোসেন মুকুল। স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসনের নজর এড়াতে এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে তারা এই ‘প্রেস ক্লাব’ গঠনের কৌশল নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গঠিত ১৮ সদস্যের কমিটিতে মাত্র দুই-একজন প্রকৃত সাংবাদিক রয়েছেন, যারা সংবাদ লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। বাকিরা সরাসরি কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এবং নতুন এই সংগঠনটি মূলত ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বুধবার সালথার একটি রেস্টুরেন্টে বসে এই সংগঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ফেসবুকে কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কেউই এই সংগঠন সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
স্থানীয়রা মনে করছেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের নজরদারির মুখে পড়া ব্যক্তিরা নিজেদের ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়ে আইনি জটিলতা ও গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রকৃত সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ ছাড়াই গঠিত এই সংগঠনকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে, এটি কি সত্যিকারের প্রেস ক্লাব, নাকি ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি একটি সংগঠন?
এই বিষয়ে জানতে মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে, এ বিষয়ে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন— “বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। আমরা অবশ্যই এটি খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, যেখানে তথ্যের সত্যতা ও নিরপেক্ষতা অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করা হলে প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। সালথা উপজেলা প্রেস ক্লাবের বিষয়ে তদন্তের পর প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে, তবে এই ধরনের সংগঠন যদি শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়ানোর জন্য গঠিত হয়, তবে এটি গণমাধ্যম ও প্রশাসনের জন্য একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।