বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার বক্তব্যকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন দেশটির বিশ্লেষকরা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে চীন সফরের সময় ড. ইউনূস মন্তব্য করেছিলেন যে ভারতের পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত এবং তাদের সমুদ্রের সঙ্গে কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। তিনি দাবি করেন যে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।
ড. ইউনূসের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রি এটিকে ‘অত্যন্ত অদ্ভুত’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ড. ইউনূস এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা ও চুক্তি রয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ যদি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগের অধিকার দিতে আগ্রহী না হয়, তবে তারা জলপথ ব্যবহারের অধিকারও পাবে না।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রফুল বাকশি মন্তব্য করেছেন যে ভারত বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু এর বিনিময়ে কোনো মানচিত্রগত সুবিধা নেয়নি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান মিলে ‘চিকেনস নেক’ (সিলিগুড়ি করিডোর) ব্যবহার করে ভারতকে চাপে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে।
বাকশি আরও বলেন, বাংলাদেশকে বুঝতে হবে যে ভারতও সমুদ্রপথের মাধ্যমে তাদের চাপে ফেলতে পারে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ এক পোস্টে ইউনূসের মন্তব্যকে ‘আপত্তিজনক ও নিন্দনীয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এই মন্তব্য ভারতের কৌশলগত ‘চিকেনস নেক’ করিডোর নিয়ে চলমান নিরাপত্তা ঝুঁকির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
শর্মা জোর দিয়ে বলেন, সিলিগুড়ি করিডোরের নিচে ও আশেপাশে শক্তিশালী রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি। একই সঙ্গে এই করিডোরের বিকল্প পথও অনুসন্ধান করতে হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি বাংলাদেশ-ভারত-চীন ত্রিমুখী সম্পর্কের জটিলতাকে ফুটিয়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা বাড়ায় ভারতের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চীনের ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ ভারতকে নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
এই বিবাদ কূটনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সংবেদনশীল অধ্যায়ে পরিণত হতে পারে। ইতিমধ্যেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ও নদীর পানি বণ্টনসহ বেশ কিছু কূটনৈতিক জটিলতা মোকাবিলা করছে।
এখন দেখার বিষয়, দুই দেশের সরকার কীভাবে এই কূটনৈতিক উত্তেজনা সামাল দেয় এবং পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখে।