বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভারত-বিরোধী নীতিমালা ও নানা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের সাউথ ব্লক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরটি মনে করছে, বর্তমান সরকার ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার’ মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে সাধারণ জনগণের উপর।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ছয়টি প্রধান বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নীতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ ও আত্মঘাতী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আটকে দেওয়া।, দেউলিয়া রাষ্ট্র পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে অর্থনৈতিক সুবিধার খোঁজে যাওয়া।, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক স্বস্তির চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনে বেশি মনোযোগ।, তৈরি পোশাক খাতে একের পর এক শিল্পকারখানার বন্ধ হয়ে যাওয়া।, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বের ভয়াবহ বৃদ্ধি।
১৫ বছর পর ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে, যেখানে করাচি-চট্টগ্রাম নৌপথ ও বিমান চলাচল পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করছে, এই পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কে তিক্ততা বাড়াবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, “পাকিস্তান নিজেই যেখানে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, সেখানে বাংলাদেশের তার উপর নির্ভরতা শুধুই মূর্খতার পরিচায়ক।”
বর্তমানে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই এবং গাজীপুর এলাকায় ৬৮টি পোশাক ও বস্ত্র শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরও ছয়টি কারখানা মে মাস থেকে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ।
মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, অনাদায়ী ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরতা, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা হারানো, উৎপাদন ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি, ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি হ্রাস।
এতে হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন এবং বহু শ্রমিক আন্দোলনে নেমেছেন। প্রায়ই সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
ভারত সম্প্রতি তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করেছে। পাল্টা হিসেবে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় সূত্রের দাবি, এর মূল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ আগেই নিয়েছিল এবং ভারতের চারটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে ইউনূস সরকার।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেই নয়, বরং আঞ্চলিক কূটনীতিতেও নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করছে। ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো এবং বিকল্প সহযোগিতার সন্ধান কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।