দ্য ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার কথা।
গত আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের জোয়ারে ক্ষমতাচ্যুত হন দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এরপর, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড. ইউনূস সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞ না হওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে, ছাত্র আন্দোলনকারীদের কঠোর দাবির পাশাপাশি বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া ১৭ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা উদ্ধারে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া আইএমএফ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের বেইলআউট এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১.২ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
যদিও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় অর্থনীতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে, তবুও সামনে রয়েছে চ্যালেঞ্জ। খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের বকেয়া নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।
ড. ইউনূসের সরকার একটি আইনগত ভিত্তিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, যেহেতু ২০১১ সালে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। তার নৈতিক কর্তৃত্ব ও জনপ্রিয়তার ওপর সরকার টিকে আছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।
ছাত্র আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং শেখ হাসিনার বিচার দাবি করছে। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। এই দুই পক্ষের চাপে ড. ইউনূস সংকুচিত হচ্ছেন।
দ্য ইকোনমিস্ট ড. ইউনূসকে দ্রুত নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছে। এটি হতে পারে এক বছরের মধ্যে। একই সঙ্গে আইনি ও নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করতে তাকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়ে এবং পশ্চিমা সহায়তা না বাড়ে, তবে দেশটি চীনের ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে চীন বাংলাদেশকে ৫ বিলিয়ন ডলারের অনুদান ও ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখনো স্পষ্ট নয়। তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ওপর নির্ভর করছে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। তবে সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে বা চরমপন্থা বৃদ্ধি পেলে দেশের বিপ্লব এক অনিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।