বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ এখন পর্যন্ত মূলত সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরশীল। তবে এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে দেশের মানুষ এবার স্যাটেলাইট প্রযুক্তিনির্ভর ইন্টারনেট সেবা পেতে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্টারলিংক বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে তাদের ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)-এর স্টলে বসানো বিশেষ কিউআর কোড স্ক্যান করে আগত দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে স্টারলিংকের ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করার সুযোগ পান। এ সময় এই স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট ব্যবহার করে সম্মেলনের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এর আগে, গত ২৯ মার্চ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) স্টারলিংকের বিনিয়োগ নিবন্ধন অনুমোদন দেয়। বিনিয়োগ নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও তার আগেই দ্রুত সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।
স্টারলিংকের সেবা প্রসঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কলে আলোচনা করেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এই আলোচনা স্টারলিংকের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করে তোলে। এরপর গত মাসেও ঢাকায় একাধিকবার সেবাটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, স্টারলিংকের আগমনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল কানেক্টিভিটির এক নতুন যুগ শুরু হলো। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও সহজলভ্য হবে উচ্চগতির ইন্টারনেট, যা শহর ও গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে।
স্টারলিংক জানিয়েছে, বাসাবাড়িতে সেবা নিতে হলে গ্রাহকদের একটি বিশেষ স্টারলিংক কিট কিনতে হবে। এই কিটে থাকে একটি অ্যানটেনা (রিসিভার), কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার এবং পাওয়ার সাপ্লাই। এই কিটের মূল্য ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা)।
আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা)। তবে করপোরেট গ্রাহকদের জন্য এই খরচ আরও বেশি। বিশ্বব্যাপী দেশের ভেদে এই দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভুটানে স্টারলিংকের মাসিক খরচ প্রায় ৫ হাজার ৮০০ টাকা।
বাংলাদেশে এই সেবা পুরোপুরি চালু হলে একদিকে যেমন উন্নতমানের ইন্টারনেট সংযোগ মিলবে, অন্যদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।