ঢাকা ও বেইজিং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের উপকূলীয় শহরে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে চীনের নির্বাহী ভাইস-প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
ডিং জুয়েশিয়াং জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখেন এবং আশা করেন বাংলাদেশ আরও বিকশিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক-চীন নীতির প্রতি দেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে গর্বের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ চীনের সহায়তায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, ঋণের সুদের হার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১-২ শতাংশ করা এবং প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফের আহ্বান জানায়। প্রধান উপদেষ্টা চীনের উৎপাদন শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স, চিপ উৎপাদন এবং সৌর প্যানেল শিল্পের স্থানান্তর সহজতর করার জন্য সহায়তা চান।
চীন ঘোষণা করেছে যে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বাড়ানো হবে। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
চীন বাংলাদেশের মংলা বন্দর এবং দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের আধুনিকায়নে অর্থায়ন করবে। এছাড়া, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার জন্য চীনের তহবিল নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে চীন আম আমদানি শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে কাঁঠাল, পেয়ারা ও অন্যান্য জলজ পণ্য আমদানির পরিকল্পনা করছে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও বৃত্তি দেবে। বর্তমানে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে।
চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ উৎসাহিত করবে, যাতে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান ত্বরান্বিত হয়।
বৈঠকের শেষে অধ্যাপক ইউনূস চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করতে একসঙ্গে কাজ করা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি, রেল ও সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।