সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর দীর্ঘ দুই যুগেও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়নি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রাম-বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে পানির ঘাটতির কারণে বড় পণ্যবাহী ও রাসায়নিক সারবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীরা বাড়তি খরচে ছোট লাইটার জাহাজ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা বন্দর ব্যবহারের প্রতি তাদের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।
নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় গত এক যুগ ধরে নৌ-রুটটি সংকটে রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর হওয়ায় সাত/আট ফুটের বেশি গভীর ড্রেজিং করা যাচ্ছে না, অথচ বড় জাহাজ চলাচলের জন্য প্রয়োজন ১০-১২ ফুট পানির ড্রাফট। ফলে সেচ মৌসুমে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে ইউরিয়া সার মজুত ও পেট্রোল-ডিজেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাঘাবাড়ী বাফার গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আনসারী জানান, বর্তমানে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে সার আনা হলেও তা সময়মতো পৌঁছায় না। সিরাজগঞ্জে সারের চাহিদা ১০,২৮১ টন হলেও মজুত রয়েছে মাত্র ৭,৭৩৪ টন। শুষ্ক মৌসুমে তেল পরিবহনেও সংকট দেখা দেয়। যমুনা ওয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবুল ফজল মো. সাদেকিন জানান, স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো ১০-১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করলেও এখন তা ৮-৯ লাখ লিটারে নেমে এসেছে।
বাঘাবাড়ী নৌযান লেবার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার জানান, উত্তরাঞ্চলের ৯০% জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে সরবরাহ করা হয়। তবে নাব্য সংকটের কারণে বড় জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না।
বিআইডব্লিউটিএ-এর উপসহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় এখানে সাত ফুট পানি ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারে। বর্তমানে সাড়ে ৯ ফুট পানি থাকলেও বড় জাহাজের জন্য তা যথেষ্ট নয়। তবে, বন্দরের প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প পরিকল্পনার কাজ চলছে, যা অনুমোদিত হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত না হলে ভবিষ্যতে সার, তেল ও অন্যান্য পণ্যের পরিবহন আরও ব্যাহত হবে, যা কৃষি উৎপাদন ও ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।