নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ, যাচাই এবং তালিকাভুক্তি করা হবে। ইসি এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে, যেখানে ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচি সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচি ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ সময় ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করবেন তথ্যসংগ্রাহক ও সুপারভাইজাররা।
২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পূর্ববর্তী ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন, তাদেরও তালিকাভুক্ত করা হবে। মৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে কর্তন করা হবে। আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটারদের স্থানান্তরের বিষয়েও কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও এবার ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
১. পহেলা জানুয়ারি ২০০৮ বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের এবং পূর্ববর্তী তালিকায় বাদ পড়া ব্যক্তিদের তথ্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা। ২. তথ্য সংগ্রহের সময় নিশ্চিত করতে হবে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইতঃপূর্বে ভোটার হয়েছেন কি না। ৩. বাদ পড়া ভোটারদের ক্ষেত্রে বাদ পড়ার কারণ যাচাই করতে হবে। ৪. কোনো ব্যক্তির নামের আগে বা পরে পেশা, খেতাব, পদবি বা শিক্ষাগত যোগ্যতা সংযুক্ত করা যাবে না। ৫. ভোটারদের বাংলা নামের ইংরেজি বানান যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ৬. বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য অনুপস্থিত ব্যক্তিদের তথ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ৭. নিবন্ধন কেন্দ্রে আসার জন্য ফরম-৫ পূরণের সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন স্লিপ প্রদান করতে হবে। ৮. সুপারভাইজারদের প্রতিদিন তথ্যসংগ্রহকারীদের কাজ তদারকি ও নমুনা যাচাই করতে হবে। ৯. ফরম পূরণের পর দৈবচয়নের ভিত্তিতে সুপারভাইজাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুদ্ধতা যাচাই করবেন। কোনো ভুল ধরা পড়লে তা সংশোধন করতে হবে। ১০. ভোটারযোগ্য মহিলাদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই তাদের বাদ দেওয়া যাবে না। ১১. নিবন্ধন ফরম পূরণের পর নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ১২. বিশেষ এলাকার জন্য তথ্য ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় যাচাই শেষে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ১৩. এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ভোটার স্থানান্তরের আবেদন সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। ১৪. মৃত ভোটারের নাম কর্তনের জন্য ফরম-১২ পূরণের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জীবিত ভোটার যেন ভুলক্রমে মৃত হিসেবে লিপিবদ্ধ না হন তা নিশ্চিত করতে হবে। ১৫. সুপারভাইজার, তথ্য সংগ্রহকারী এবং শনাক্তকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। ১৬. কোনোভাবেই রোহিঙ্গা বা ভিনদেশি ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
গত ২ জানুয়ারি ২০২৫ সালের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। নতুন করে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন ভোটার। সবশেষ গত বছরের ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় ভোটার সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ। নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন।
নির্বাচন কমিশনের এই হালনাগাদ কর্মসূচি ভোটার তালিকাকে আরও সঠিক ও আপডেটেড করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বাদ পড়া ভোটারদের তালিকাভুক্তি, মৃত ভোটারদের নাম কর্তন এবং স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায়। ইসি আশা করছে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হবে।