মানুষের নেতিবাচক কার্যকলাপ পৃথিবীর সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যার ফলে নিত্যনতুন মহামারির উদ্ভব ঘটছে। বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ানো হয়েছে, যার কারণে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সুস্থ ইকোসিস্টেম প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিক থাকলে শিকারি ও শিকারের মধ্যে গতিশীল সম্পর্ক বজায় থাকে, যার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছপালার বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে এই ভারসাম্য এখন হুমকির মুখে।
বর্তমানে বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির মতো কর্মকাণ্ড পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করছে। এর ফলে রোগজীবাণু আরও দ্রুত এবং সহজে ছড়িয়ে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে রোগ বহনকারী মশা এখন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অধিক পরিমাণে দেখা যাচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জীববৈচিত্র্যের ওপর মানুষের কার্যকলাপের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ক্ষতিকর রোগজীবাণু বন্য প্রাণী থেকে মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকায় বন উজাড়ের ফলে জলাতঙ্কের মতো রোগের বিস্তার বেড়েছে। গবেষকেরা মনে করেন, প্রাণীঘটিত রোগের উত্থানে মানুষের কার্যকলাপ একটি বড় কারণ। বন উজাড়ের কারণে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে, যা তাদেরকে মানুষের কাছাকাছি আসতে বাধ্য করছে। তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে রোগবাহী মশা এবং অন্যান্য পরজীবী প্রাণী নতুন অঞ্চলে বিস্তার ঘটাচ্ছে। শিকারি ও শিকারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে রোগজীবাণুর বৃদ্ধি বাড়ছে।
গবেষকেরা মনে করেন, মানবস্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে আন্তনির্ভরতা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ভবিষ্যতে মহামারি এড়াতে নিচের কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে, বন উজাড় রোধ করা, জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করতে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় টেকসই উন্নয়নের মডেল অনুসরণ।
গবেষণার নেতৃত্বদানকারী গবেষকরা সতর্ক করেছেন, যদি মানুষের কার্যকলাপের নেতিবাচক প্রভাব বন্ধ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও প্রাণঘাতী মহামারির সম্মুখীন হতে হবে। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র সুস্থ রাখতে প্রকৃতি এবং মানুষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।