বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার (২২ মার্চ) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্য সকল সংস্কার প্রচেষ্টা পরিচালিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ঐক্যের চর্চাকে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে এবং কোনও পদক্ষেপ যেন জাতীয় ঐক্য ও গণঐক্য বিনষ্ট না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে এবং কোনও বিশেষ মহলকে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত না হয়।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত, যা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে। প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহারের নানা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সাংবিধানিক কমিশনসহ বিভিন্ন নতুন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কার্যত আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে দিতে পারে। এতে করে একটি অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভূমিকা খর্ব করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি করা যেতে পারে। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার তা বাস্তবায়ন করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা এবং দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করা। কারণ নির্বাচিত সরকারই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের স্প্রেডশীট এবং কমিশনের সদস্যদের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে মনে হয়, কিছু সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত। এতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসানোর ইঙ্গিত স্পষ্ট।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের ভিত্তি তৈরি করেছে, যা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই উপস্থাপন করা হয়। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করেন এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর জোর দিচ্ছেন। পাশাপাশি, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি ৩১ দফা সংস্কারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়, যা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন সম্ভব।