বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস পার না হতেই এর প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও সহিংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থাকে, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।”
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে। প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। এই বিজয় এসেছে অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু সেই বিজয়ের ফল আমরা এখন যে বাংলাদেশে দেখছি, তা হতাশাজনক। তিন মাস পার হতে না হতেই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই, একে অপরের বিরুদ্ধে রক্তপাত শুরু হয়েছে।”
বিএনপির মহাসচিব সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “ধর্মকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক ধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মুক্ত ও স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা যেসব লড়াই করেছি, তার ফলাফলে এখন মিডিয়ার অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কি এ ধরনের বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমি অন্তত চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “কিছুসংখ্যক মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ভাষা ব্যবহার করছেন যা আতঙ্ক তৈরি করছে। ‘পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও’—এ ধরনের উগ্র কথাবার্তা এখন শুনতে হচ্ছে। এটা দেশকে ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা কি বুঝি আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? আমাদের দায়িত্বহীন কথাবার্তা যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য এই ত্যাগ আমাদের পথ দেখায়। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই বিভেদে জড়িয়ে পড়ি, তাহলে কোনোদিনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং শান্তি বজায় রাখতে হবে।”