প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশকে বদলাতে চাইলে পরিচালনার পদ্ধতি পাল্টাতে হবে এবং এতে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংককের স্থানীয় সময় বিকালে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে ‘বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরাম: হোয়ার দ্যা ফিউচার মিটস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে সম্প্রতি ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, “এই ঘটনা আমাদের মানুষকে রক্ষার সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে। প্রকৃতির আচরণ সম্পর্কে আমরা এখনও আগে থেকে জানতে পারি না। বাংলাদেশও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তবে এখনো বড় কোনো দুর্যোগের মুখোমুখি হয়নি।”
ড. ইউনূস মনে করেন, ব্যবসা শুধুমাত্র মুনাফার জন্য পরিচালিত হওয়া উচিত নয়; বরং এটি সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের সম্পদের ভারসাম্য আনতে হবে এবং পরিবেশের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ অনেক বড় দেশ হলেও আমি ছোট পরিসরেই কাজ করতে চাই।”
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, “গরিব মানুষের চাকরির প্রয়োজন, কিন্তু অন্যরা মনে করে অর্থ চাকরির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলতে শুরু করলাম, ঋণ পাওয়াও মানবাধিকারের অংশ। তখন অনেকে প্রশ্ন তুললো, ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে মানবাধিকারের সম্পর্ক কী? আমি ভাবলাম, যদি ব্যাংক ঋণ না দেয়, তবে আমি কেন নিজেই তাদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছি না?”
তিনি জানান, মাত্র ১ ডলার ঋণ দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম শুরু করেন এবং পরে সেটিই রূপ নেয় গ্রামীণ ব্যাংকে। অনেক সময় লেগেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রামের মানুষের জন্য একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমি গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু পুরো গ্রাম পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তাই একজন করে সাহায্য করা শুরু করলাম। একবার একজন নারীর সঙ্গে দেখা হয়, যিনি ঋণ শোধ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। আমি তাকে সামান্য অর্থ সহায়তা দিলাম, যাতে তিনি তার পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারেন। এটি ছিল আমার দেওয়া প্রথম ঋণ, যা তাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে উঠে এসেছে সমাজ পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা, ন্যায্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার হিসেবে ঋণের গুরুত্ব। তার মতে, ব্যবসা শুধু লাভের জন্য নয়, বরং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও কাজ করা উচিত।