বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একের পর এক নারী কেবিন ক্রুদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে, যা তাদের নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলন্ত বিমানের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা ককপিটে, যেখানে পাইলটদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগগুলি বেশ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালেও এমন অভিযোগ উঠেছিল, তবে সে সময় কোনো দৃশ্যমান শাস্তি কার্যকর হয়নি।
বর্তমানে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-জেদ্দা, জেদ্দা-সিলেট-ঢাকা এবং ঢাকা-মাসকাট-ঢাকা ফ্লাইটে দুইজন নারী কেবিন ক্রু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাফিকুর রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
১৪ নভেম্বর বিমানের সিইও বরাবর এক নারী কেবিন ক্রু এক পাইলটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ১০ নভেম্বর বিজি-১৩৫ ফ্লাইটে (ঢাকা-চট্টগ্রাম-জেদ্দা) পাইলট মুনতাসীর ও আবেদ তাকে ককপিটে ডেকে নিয়ে অপেশাদার ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলেন এবং পরবর্তী সময়ে একা পেয়ে তাকে জোরপূর্বক হ্যান্ডশেক করতে চান।
এরপর ১২ নভেম্বর ফিরতি ফ্লাইট বিজি-২৩৬ (জেদ্দা-সিলেট-ঢাকা) চলাকালীন পাইলট আবেদ ককপিটে গিয়ে তাকে অশ্লীল মন্তব্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন, যার বিরুদ্ধে তিনি এমডি ও সিইও বরাবর অভিযোগ করেন।
এছাড়া, ৩ নভেম্বর মাসকাটগামী বিজি-৭২১ ফ্লাইটে পাইলট ইউসুফ মাহমুদ এক নারী কেবিন ক্রুকে ককপিটে ডেকে শরীর স্পর্শ করেন এবং জোর করে কমলা খাইয়ে দেন। এই ঘটনায়ও অভিযুক্ত পাইলটের বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর বিমানের এমডি ও সিইও বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়বে। বিমানের এমডি সাফিকুর রহমান জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম মন্তব্য করেন, “বিমানের ককপিটে কেবিন ক্রুকে যৌন হয়রানির ঘটনা অপ্রত্যাশিত। এটি পাইলটদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। আকাশপথে এ ধরনের কর্মকাণ্ড খুবই বিপজ্জনক।” তিনি আরও বলেন, “ফ্লাইটে নিরাপত্তার জন্য সবাই আকাশপথ বেছে নেয়, সেখানে নারী কেবিন ক্রুদের যৌন হয়রানি দুঃখজনক এবং এটি তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে শনাক্ত করে দৃশ্যমান শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।”
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক নারী কর্মকর্তা জানান, “কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী কেবিন ক্রুরা নিরাপদ কর্ম পরিবেশের জন্য বিমানের কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।”
এখনো সময় রয়েছে, যাতে বিমানের কেবিন ক্রুরা নিরাপদ এবং সম্মানজনক কর্ম পরিবেশ পায় এবং যাতে যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে। এসব ঘটনা বিমানের সম্মান এবং কর্মীদের আত্মবিশ্বাসে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, তাই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব বাড়ছে।
বিমান কর্তৃপক্ষের উচিত, এই ধরনের ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয় এবং নারী কর্মীরা নির্ভয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।