যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিলাসবহুল পণ্যের বাজারে ভর করেছে অনিশ্চয়তা ও সংকট। এই প্রেক্ষাপটে চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য ঝড় তুলেছে বিশ্বজুড়ে।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এবং মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, গুচি, প্রাডা, চ্যানেল, ফেন্ডি এবং হারমেসের মতো প্রথম সারির বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের অধিকাংশ পণ্য চীনের কারখানায় তৈরি হয়। এরপর সেইসব পণ্যে ‘Made in France’ বা ‘Made in Italy’ ট্যাগ লাগিয়ে উচ্চ মূল্যে বাজারজাত করা হয় ইউরোপ ও আমেরিকায়।
একজন চীনা টিকটকার ভিডিওতে বলেন, “আপনি গুচি থেকে যা-ই কিনুন না কেন, তার প্রায় ৮০ শতাংশই চীনে তৈরি। প্রাডার ৬০ শতাংশ পণ্য চীন থেকে আসে।” তিনি এই চিত্রকে তুলনা করেন “The Wizard of Oz” সিনেমার মতো এক বিভ্রমের সঙ্গে।
এই তথ্য ফাঁস হওয়ার সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে ১৪৫% শুল্ক আরোপ করেন, যার জবাবে চীনও ১২৫% পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বড়সড় পতন লক্ষ্য করা গেছে।
বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল বাজারের আকার যেখানে প্রায় ৩৮০ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪ সালে ২% হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে বড় পতন লক্ষ্য করা গেছে চীনা বাজারে, যেখানে এক দশক আগে বিশ্বের বিলাসবহুল পণ্যের ৫০% বিক্রি হতো, সেটি এখন নেমে এসেছে মাত্র ১২ শতাংশে।
মহামারির পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং ‘স্মার্ট শপিং’ মেন্টালিটির কারণে চীনা তরুণ ক্রেতারা এখন দেশীয় ব্র্যান্ডে ঝুঁকছেন। এই দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক কম দামে উচ্চমানের পণ্য দিচ্ছে, যার ফলে ইউরোপীয় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি হ্রাস পাচ্ছে।
টিকটক অ্যাকাউন্ট @senbags2 থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একজন ব্যক্তি দাবি করেন, “আমরা গত ৩০ বছর ধরে গুচি, প্রাডা, লুই ভিটনের মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের জন্য OEM ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করছি।” তিনি বলেন, “যারা মনে করছেন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে, তারা ভুল ভাবছেন। তারা চেষ্টাও করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। চীনের বাইরে সেই মানের উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।”
এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক তুঙ্গে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, “গুচি বা হারমেসের হাজার ডলারের ব্যাগ যদি চীনে তৈরি হয়, তাহলে সেটি কি সত্যিই বিলাসবহুল?” পশ্চিমা ভোক্তা সংস্কৃতির চিত্র পাল্টে যাচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।