পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক প্রাণীগুলোর মধ্যে মাকড়সা একটি। আট পায়ের এই ক্ষুদ্র প্রাণী শিকার ধরার আগে শিকারকে আটকে ফেলে এবং বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলার জন্য পরিচিত। যদিও বেশির ভাগ মাকড়সার কামড় মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়, তবে কয়েকটি প্রজাতি অত্যন্ত বিষাক্ত এবং তাদের কামড়ে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। আসুন বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত ১০টি মাকড়সা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অস্ট্রেলিয়ান ফানেল-ওয়েব মাকড়সা
বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাকড়সা হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ফানেল-ওয়েব পরিচিত। এটি অতি আক্রমণাত্মক এবং প্রাণঘাতী। বিপদের সামান্য আঁচ পেলেই এই মাকড়সা আত্মরক্ষার্থে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। একবার আক্রমণে এটি কয়েকবার কামড় দিতে পারে। এর কামড় অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং দ্রুত শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে।
ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা
ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং বিপজ্জনক মাকড়সা। একটি পূর্ণবয়স্ক মাকড়সার আকার প্রায় ৪৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। রাতে শিকার খুঁজতে এই মাকড়সা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। দিনে এটি সাধারণত কলাগাছের কাদি বা অন্যান্য ফলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এ কারণে এটি ব্যানানা স্পাইডার নামেও পরিচিত। এর কামড়ে রক্তচাপ বেড়ে যায়, জ্বর, বমি, অতিরিক্ত ঘাম এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
চিলির রেকলুস মাকড়সা
চিলির রেকলুস মাকড়সা সাধারণত চিলি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের কিছু অঞ্চলে দেখা যায়। এটি দেখতে বাদামি রঙের এবং এর কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর বিষ মানবদেহের কোষ ধ্বংস করতে পারে, যা নিরাময় হতে কয়েক মাস সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে এর কামড়ে কিডনি অকেজো হয়ে পড়তে পারে এবং তা থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
ব্রাউন রেকলুস মাকড়সা
ব্রাউন রেকলুস মাকড়সা সাধারণত উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে দেখা যায়। এটি খুবই লাজুক এবং নির্জনপ্রিয়। এর কামড়ে শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়, যা বমি, জ্বর এবং ত্বকের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
রেডব্যাক স্পাইডার
রেডব্যাক মাকড়সা অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিপজ্জনক মাকড়সা। এটি লাল পিঠের জন্য পরিচিত। এই মাকড়সা শিকার খুঁজে পেলে প্রথমে আঠালো পদার্থ ছুড়ে শিকারকে আটকে ফেলে। এরপর জালে জড়িয়ে শিকারকে কামড়ে বিষ প্রয়োগ করে। এর কামড়ে মাথাব্যথা, বমি এবং পেশিতে অবশভাব দেখা দিতে পারে।
সাউদার্ন ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা
ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা পরিচিত বিপজ্জনক মাকড়সাগুলোর একটি। এটি সাধারণত নিজের জালে ঝুলে থাকে এবং বিপদের সময় আক্রমণ করে। ব্ল্যাক উইডোর কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল হলেও শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। নারীদের পেটে লাল দাগ থাকায় এদের সহজেই শনাক্ত করা যায়।
হোয়াইট-টেইলড মাকড়সা
হোয়াইট-টেইলড মাকড়সা সাধারণত পোশাক ও জুতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এটি অন্য মাকড়সাকে শিকার করে। এ মাকড়সার কামড়ে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা এবং ত্বকে জ্বালা দেখা দিতে পারে।
ব্রাউন উইডো মাকড়সা
ব্রাউন উইডো মাকড়সা সারা পৃথিবীতেই দেখা যায়। এটির ডোরাকাটা পা এবং উজ্জ্বল দাগ দেখে সহজেই চেনা যায়। যদিও এর বিষ ততটা মারাত্মক নয়, তবে কামড়ের পর ব্যথা ও বমি হতে পারে।
লাইকোসা টারান্টুলা মাকড়সা
লাইকোসা টারান্টুলা মাকড়সা আকারে বড় এবং এটি সাধারণত দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে দেখা যায়। এ মাকড়সার দৃষ্টিশক্তি প্রখর এবং এটি নিশাচর। এর কামড়ের ঘটনা খুবই বিরল এবং বিষও ততটা ক্ষতিকর নয়।
মাউস স্পাইডার
মাউস মাকড়সা ইঁদুরের মতো মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে। এটি খুব একটা আক্রমণাত্মক নয়। তবে এর কামড়ে মাথাব্যথা এবং শরীরে অবশভাব দেখা দিতে পারে। যদিও দেখতে ভয়ংকর, এর বিষ তেমন বিপজ্জনক নয়।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
বিষাক্ত মাকড়সার কামড় থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি, ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে, পোশাক ও জুতা ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝেড়ে নিতে হবে, গৃহস্থালির জায়গাগুলোতে মাকড়সার জাল অপসারণ করতে হবে।
মাকড়সা পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণীগুলোর একটি। যদিও বেশির ভাগ প্রজাতি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু প্রজাতির বিষ প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই মাকড়সা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা এবং সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বিষাক্ত মাকড়সা পাওয়া যায়, সেসব অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।